প্রথম ঋতুস্রাব বৃহৎ রতিশাস্ত্র থেকে আলোচনা।
গিরিরাজনন্দিনী পার্বতী ধৈর্যসহকারে মহাদেবের কাছ থেকে সমস্ত শাস্ত্রবচন শুনলেন।
তার মন আনন্দে ভরে উঠল।
মহাদেবের মত জ্ঞানী যে সারা বিশ্বে দুর্লভ তা তিনি তার মুখ থেকে সমস্ত শাস্ত্রবচন শুনে স্পষ্টই বুঝতে পারলেন।
তিনি তখন অত্যন্ত বিনয় বচনে ধীরে ধীরে মহাদেবকে বললেন-হে দেব! আপনার মুখে সমস্ত শাস্ত্রবচন শুনলাম। আপনার পায়ে আমার ভক্তিপূর্ণ নমস্কার।
এখন আপনার নিকট আমি যা জানতে চাই, আশা করি তা আমার কাছে বর্ণনা করে আমার মনের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে নিশ্চয়ই সচেষ্ট হবেন।
নারীজাতির ঋতুলক্ষণের বিষয় শোনবার জন্যে আমার একান্ত কৌতুহল হয়েছে। অর্থাৎ নারীজাতি যখন প্রথম রজঃস্বলা (প্রথম ঋতুস্রাব) হয় তার তিথি, মাস, নক্ষত্র, বার প্রভৃতি দোষ-গুণে কিরূপ ফল পায় তা কৃপা করে আমাকে বলুন।
এতং ত্বয়েরিতং সব্বং নমস্তেহস্তু নমােনমঃ।।
আধুনা ক্ৰহি মে দেব নারীণাং ঋতুলক্ষণং ।
দেবীর কথায় মহাদেব সন্তুষ্ট হলেন।
তিনি বললেন –হে দেবি ! এবারে আমি নারীদের ঋতুলক্ষণগুলি একে একে বর্ণনা করছি, তুমি তা শ্রবণ কর এগুলি শুনলে রতিশাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞানলাভ হয়ে থাকে ।
সবার আগে তিথিফল অর্থাৎ কোন্ তিথিতে আদ্যঋতু হলে কিরূপ ফল হয় সে বিষয়ে বলতে উদ্যত হয়েছি। তুমি নিবিষ্ট মনে আমার বাক্য শ্রবণ কর।
শূণু দেবি প্রবক্ষ্যামি নারীণাং ঋতুলক্ষণং।।
যচ্ছা জায়তে জ্ঞানং রতিশাস্ত্রে মহেশ্বরি।
তাদৌ তু প্রবক্ষামি তিথিনাং ফলমুত্তমং ।
শৃণুকৈমনা ভূত্বা রতিশাস্ত্রোদিতং যথা।।
আদখা হয় তিথিল মহাদেব বললেন-হে দেবি !
এখন প্রথম ঋতুস্রাব (আদ্যঋতুর) তিথিফল শােন।
প্রথমা অর্থাৎ প্রতিপদ তিথিতে যে নারীর ঋতুপদ্ম বিকশিত হয়, যে নারী শমনভবনে যায় অর্থাৎ অল্পদিনে তার মৃত্যু হয়, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
হে প্রিয়ে! যদি দ্বিতীয়া তিথিতে কোন নারী প্রথম ঋতুস্রাব হয়, তাহলে সেই নারীর স্মৃতিশক্তির তীক্ষ্ণতা কমে যায়, এই নির্দেশ দিয়ে থাকেন শাস্ত্রবিদ পণ্ডিতেরা।
হে মহেশ্বরি! তৃতীয়া তিথিতে যদি নারীজাতির কমল বিকাশপ্রাপ্ত হয় তাহলে তার ঋতু বিফল হয়ে যায়। তাতে কোন সন্তান জন্ম হয় না।।
হে প্রিয়ে! তার পরবতী ঋতুদর্শনের বর্ণনা শােন। চতুর্থী তিথিতে কোন নারী যদি প্রথম ঋতুদর্শন করে, তা হলে সে বন্ধ্যা হয়ে থাকে।
যদি পঞ্চমী তিথিতে কোন নারী ঋতুদর্শন করে, তা হলে সে অল্পদিনের মধ্যে মারা যায়। এ কথা শাস্ত্রের বচন।
ষষ্ঠী তিথিতে যদি কোন নারী আদ্যঋতু দর্শন করে তবে তার অবস্থা প্রথমার মত হয়, অর্থাৎ সেও অল্পদিনের মধ্যে মারা যায়। এ কথা নিশ্চিত সত্য।।
সপ্তমী তিথিতে কোন নারী আদ্যঋতু দর্শন করলে সে হয় কাকবন্ধ্যা, আর অষ্টমী তিথিতে আদ্যঋতু যদি নারীর হয়, সে হয় নাগিনীস্বরূপা অর্থাৎ মন হয় হিংসুটে ও বিদ্বেষভাবাপন্ন।
হে দেবি, যে নারী নবম তিথিতে প্রথম ঋতুদর্শন করে, তাকে নারী জাতির মধ্যে উৎকৃষ্টা বলে জানা যায়। সে নারী সুসন্তানের জননী হয়।
কিন্তু দশমী তিথিতে আদ্যঋতু দর্শন করলে সেই নারী হয় রাক্ষসী স্বরূপ অর্থাৎ রাক্ষসীর মত ভয়াবহ। এটি যে নিভূল কথা, তা শাস্ত্রকারগণ স্বীকার করেছেন।
একাদশী তিথিতে কোনও নারী যদি প্রথম ঋতুস্রাব দর্শন করে তবে তাকে ডাকিনী বলে জ্ঞান করবে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
দ্বাদশী তিথিতে যে কন্যা ঋতুমতী হয় তাকে যোগিনী বলে জ্ঞান করতে হবে।
ত্রয়ােদশী তিথিতে যে নারী আদ্যঋতু দর্শন করে, সে খুবই পতিব্রতা ও পতিভক্তিপরায়ণা। সে আদর্শ গৃহিণী হয়, এটি শাস্ত্রের কথা।
চতুর্দশী তিথিতে যদি কোনও নারী আঋতু দর্শন করে তবে সে লক্ষ্মীভ্রষ্টা হয় অর্থাৎ তার ধন-দৌলত নষ্ট হয়।।
পূর্ণিমা তিথিতে যদি কোনও নারী ঋতুমতী হয়, তাকে দেবীরূপিণী অর্থাৎ সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী বলে জ্ঞান করবে।
আর যদি অমাবস্যা তিথিতে কোনও নারী ঋতুমতী হয় তবে সে জরা রোগ ইত্যাদিতে ভুগে থাকে।
এগুলি শাস্ত্রোক্ত ভাষায়
বিসতি যদা পদ্মং প্রথমায়াং মহেশ্বরি।
অচিরাৎ মিয়তে সৈব নাত্ৰ কাৰ্যা বিচারণা ।
দ্বিতীয়ায়াং ভবেন্নারী যদি রজস্বলা প্রিয়ে।।
স্মৃতেলে পা ভবেশ্চৈব ইতি শাস্ত্রবিদাং মতং ।
বিসতি যদা পদ্মং তৃতীয়ায়াং মহেশ্বরি।
ঋতুব্যথা ভবেন্নারী শৃণু-তৎপরতাে যথা।
পঞ্চমাং মিয়তে নারী চতুর্থী বন্ধকী তথা।
ষষ্ঠ্যাং বিসতি পদ্মং পঞ্চমী ফলমায়া ৷৷
সপ্তম্যাং কাকবন্ধ্যা ত অষ্টম্যাং নাগিনী ভবেৎ।
মানবজাতিয়াং বিদ্যাং নবম্যাং দেবী সত্তমে।
বিসতি যদা পদ্মং দশম্যাং পক্ষয়ােদ্দয়েন।
রাক্ষসী সা ভবেন্নারী গীয়তে তু মনীষিভিঃ।
একাদশাস্তিথৌ নারী যদি রজোবতী ভবেৎ।
ডাকিনী তাং বিজানীয়াৎ নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।
দ্বাদশ্যাং যােগিনী চৈব যদি কন্যা রজস্বলা।
পতিব্রতা ভবেশ্চৈব ত্রয়ােদশাং মহেশ্বরি ।
লক্ষ্মীহীনা চতুর্দশাং কীৰ্ত্তিতং বিবুধৈরিতি ।
পূর্ণিমায়াং ভবেন্নারী দেবী সা লক্ষ্মীরূপিণী ।
অমবস্যাস্তিথৌ নারী যদি রজস্বলা ভবেৎ।
জরাব্যাধি সমাকীর্ণা নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।
সূত্রঃ বৃহৎ রতিশাস্ত্র