একবার কয়েকজন মহিলা এলেন সুবিখ্যাত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্নটি হল, একজন পুরুষের এক সঙ্গে চার জন স্ত্রী রাখার অনুমােদন আছে। কিন্তু একজন স্ত্রী এক সঙ্গে দু’জন স্বামী গ্রহণ করতে পারে না, এর কারণ কি?
গুরুতর প্রশ্ন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সেই মুহূর্তে এর উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি অন্তঃপুরে এলেন। আর তাঁর বিদুষী বুদ্ধিমতী কন্যার কাছে প্রশ্নটি উত্থাপন করলেন। কন্যা বললেন, আপনি যদি আপনার নামের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেন, তাহলে আমি এর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারি। পিতা তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, মহিলাদের তােমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি মা। তুমি তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে দেবে।
তাই হল। মহিলারা তাঁর কাছে এলেন। তিনি তাদের সাবইকে একটি ঘরে পেয়ালায় কিছু দুধ আনতে বললেন। দুধ আনা হল। এবার অন্য একটি বড় পেয়ালায় প্রত্যেকের আনা দুধ ঢালতে বলা হল। মহিলারা তাও করলেন। সকলের আনা দুধ বড় পেয়ালায় মিশে গেল। তিনি আবার বললেন, এবার আপনারা যে যতটুকু দুধ এনেছেন, তা আবার আলাদা করে দিন।
তারা বললেন, তা কি সম্ভব? তিনি বললেন, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনারাই বলুন, কোন এক মহিলার একাধিক স্বামী থাকলে আর সন্তান ভূমিষ্ট হলে তা কোন স্বামীর সন্তান তা চেনবার উপায় কী?
এ প্রশ্নের আর উত্তর দেবার দরকার হল না। মহিলারা বললেন, প্রশ্নের জবাব আমরা পেয়ে গেছি। খুব খুশী হয়ে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মেয়ের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে করতে তারা চলে গেলেন। খুশী ইমাম সাহেবও তাঁর কথামতাে ঐ দিন থেকেই তিনি তাঁর প্রিয় কন্যার নাম নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিলেন। তার নতুন নাম হল আবু হানিফা। অর্থাৎ হানিফার পিতা। কন্যার নাম ছিল হানিফা। মহাকালের পৃষ্ঠায় পিতা-পুত্রীর নাম চিরদিনের মতাে মুদ্রিত হয়ে গেল।
বিশ্ব-নন্দিত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ-এর আসল নাম নােমান। পিতার নাম সাৰিত। আর চিরভাস্বর উপাধি হল, ইমাম আজম-ইমামগণের ইমাম, শ্রেষ্ঠ ইমাম। তার সূর্যসম প্রতিভার আলােক-ধারায় শুধু শরীয়ত আর মারেফাতই উদ্ভাসিত হয়নি, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর অন্তর্জোতিও বিস্তীর্ণ হয়েছে। সূক্ষাতিসূক্ষ্ম মাসআলা-সমূহের সমাধানে ও জটিলতম বিষয়-সমূহের মর্মোদঘাটনে তিনি যে নৈপুণ্য ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, জগতে তার কোন তুলনা নেই। বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী এই মহাপন্ডিত সাহাবায়ে কেরাম ও শ্রেষ্ঠ ওলী আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহচর্য লাভ করেন। যাদের সাহায্য লাভ করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন- আনাস ইবনে মালেক, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে রুমী, ওয়াসেক বিন ওয়ারাকা রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
হযরত জাফর সাদেক রহমাতুল্লাহ তার পরম বন্ধু ছিলেন। হযরত ফোজায়েল রহমাতুল্লাহ, ইব্রাহীম আদহাম রহমাতুল্লাহ, বিশর হাফী রহমাতুল্লাহ, দাউদ তায়ী রহমাতুল্লাহ প্রমুখ তাপসগণের তিনি ছিলেন মারেফাত বিদ্যার শিক্ষক। আর শরীয়তী শিক্ষাধারায় তার উজ্জ্বল শিষ্যগণ হলেন ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহ, ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহ ও ইমাম মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ অন্যান্য জ্যোতিষ্ক।
কথিত আছে, পাক রওজায় উপস্থিত হয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সম্বােধন করে বলেন, আস্সালামু আলাইকুম ইয়া সাইয়্যিদাল মুরসালীন- হে রাসূলগণের সর্দার, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হােক। তখন রওজা মুবারক থেকে জবাব আসে, ওয়া আলাইকুমুস সালামু ইয়া ইমামাল মুসলিমীন- হে মুসলিমগণের ইমাম, আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হােক।
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাকে মুসলিমগণের ইমাম বলে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছেন, তার মর্যাদা কোথায় গিয়ে পৌছায়, চিন্তা করলে আবেগ আপুত হতে হয়। তিনি এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলেন এক রাতে রাসূলুল্লাহর পাক রওজা থেকে তিনি পবিত্র অস্থি তুলে জমা করছেন এবং একখানা আরেক খানা থেকে পৃথক করছেন। এই স্বপ্ন দেখে ভয়ে অস্থির হয়ে তিনি জেগে উঠলেন এবং বিখ্যাত স্বপ্নবিশারদ আল্লামা ইবনে সবীনের এক শিষ্যের কাছে গিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইলেন। তিনি বললেন, এ স্বপ্নের অর্থ আপনি মহানবীর জ্ঞানরাজী, ফেকাহ ও হাদীসশাস্ত্রে এরূপ বুৎপত্তি লাভ করবেন। এ ছারাও উক্ত শাস্ত্র-সমূহের ভাষ্যকার হবেন। আর সত্যকে অসত্য থেকে পৃথক করার ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দান করবেন। বলাবাহুল্য, এ স্বপ্ন আক্ষরিক অর্থে ফলবতী হয়। তিনি আরও একবার স্বপ্ন দেখেন, নবী মুস্তফা (সাঃ) তাঁকে সম্বোধন করে বলছেন, হে আবু হানিফা, আল্লাহ আপনাকে আমার সুন্নত তরীকা জীবিত রাখার জন্য সৃষ্টি করেছেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। নির্জনবাস করবেন না। শরীয়তের বিধান রক্ষার তিনি ছিলেন এক অতন্দ্র প্রহরী।
এ বিষয়ে একটি ঘটনা অবশ্যই উল্লেখযােগ্য। তখন মুসলিম দুনিয়ার খলীফা আল মনসুর। তিনি বাগদাদের প্রধান কাজী ও অন্যান্য ওলামাকে ডেকে পাঠালেন। তারা এসে উপস্থিত হলেন। ওদিকে খলীফা মনসুর তার এক বিশেষ অনুচরকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন খলীফার প্রত্যেক সহচরের নামে কিছু কিছু জমি-জায়গা লিখে দেন। নির্দেশ অনুযায়ী সে কাজও সম্পন্ন হল। তারপর সাক্ষীস্বরূপ দস্তখত নেবার জন্য খলীফা তার এক সহচর মারফত দলিলগুলি পাঠিয়ে দিলেন প্রধান কাজী সাহেব ও অন্যান্য আলেমদের কাছে। প্রথমে প্রধান কাজী ও পরে অন্যান্য সই দিলেন। কিন্তু বেঁকে বসলেন আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ। সই না করে রাজকর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলেন, খলীফা এখন কোথায় কর্মচারী জানালেন, তিনি এখন বালাখানায়। ইমাম আজম বললেন, হয় আমাকে ওখানে নিয়ে চলুন না হয় তাকে এখানে আসতে বলুন। তবে সাক্ষ্য সঠিক হবে। কর্মচারী বললেন, প্রধান কাজীসহ সবাই যখন সই করছেন, তখন আপনি অযথা আপত্তি করছেন কেন? ইমাম আবু হানিফা বললেন, সে জেনে আপনার কাজ নেই। যা বলছি, করুন।
শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা খলীফার কানে গেল। তিনি প্রধান কাজীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি দস্তখত করার সময় তা উপস্থিত থেকে শুনেছেন বা দেখেছেন? কাজী জবাব দিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, সেগুলি আপনার ইচ্ছাক্রমেই হয়েছে। তাই উপস্থিতির প্রয়ােজনবােধ করিনি। খলীফা বললেন, আপনার এ কাজ ন্যায়সঙ্গত হয়নি। তাই আপনাকে আপনার পদ থেকে খারিজ করলাম। অতঃপর প্রধান কাজীর পদে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে যেকোন একজনকে নিযুক্ত করার কথা ভাবা হল। এঁরা হলেন- ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান, শােয়হ ও ইমাম শা’বী । তাদের দরবারে ডাকা হল। একই সঙ্গে আসছিলেন তারা। পথিমধ্যে ইমাম আবু হানিফা বললেন, শুনুন, আমি যে কোনভাবে হােক, এই পদ গ্রহণ করব না, সুফিয়ান আপনি সরে পড়েন। শাবী পাগলের ভান করুন। আর শােয়হ পদটি গ্রহন করুন। তার এ পরামর্ষে সুফিয়ান সত্যিই সরে গেলেন। বাকী তিন জন দরবারে হাজির হলেন।
খলীফা প্রথমে ইমাম আবু হানিফা (রাঃ)-কে পদটি গ্রহণ করার অনুরােধ জানালেন। তিনি বললেন, আমি আরবের লােক নই। অতএব আর প্রধানগণ সহজে আমার হুকুম মানতে চাইবে না। জাফর বারমাকী নামে একজন আমীর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, গােলের সঙ্গে এ পদের সম্পর্ক কি? এবার ইমাম বললেন, আমি এ পদের যােগ্য নই। এর প্রমাণ হল, আমার এ কথা হয় সত্য, নয় মিথ্যা হবে। সত্য হলে তাে আমি এ পদের উপযুক্ত নই। আর যদি মিথ্য হয়, তাহলে একজন মিথ্যাবাদীকে এরূপ দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা ঠিক নয়। একথা বলে আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ রেহাই পেলেন।
ইমাম শা’বী খলীফার হাত ধরে বললেন, জনাব, আপনি ভালো আছেন তো! আপনার পরিবার-পরিজন কেমন আছেন, খলীফা তার কথাবার্তর ধরন দেখে বুঝলেন, নিশ্চয় ভদ্রলােকের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।
এবার শােরায়হের পালা। তিনি বললেন, আমার মস্তিষ্ক অত্যন্ত দুর্বল। আমার পক্ষে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব নয়। তার কথা শুনে খলীফা বললেন, আপনি চিকিৎসা করান। রােগ সেরে যাবে। শেষ পর্যন্ত সােরায়হকেই কাজীর পদে বহাল করা হল। এরপর হতে আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ শােয়হর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। এমনকি তার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করলেন।
কাজীর পদ গ্রহণ না করার কারণ হল, তখনকার আলেমগণ প্রায় সকলেই স্বাধীনচেতা ছিলেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যাকে কাজী নির্বাচিত করা হয়েছে, তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এ মন্তব্য জানা ছিল বলে তারা এ ব্যাপারে খুবই সন্ত্রস্ত ছিলেন।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর বৈঠক শুরু হয়েছে। পাশে কয়েকটি ছেলে বল খেলছিল। হঠাৎ বলটি একবার এসে পড়ল আসরের মাঝখানে। আর কোন বালকই সেটা নিতে সাহস করল না। কিছুক্ষণ পরে একটি ছেলে সভাস্থ কাউকে সমীহ না করে, বলটি আসর থেকে তুলে নিয়ে গেল। তার হাবভাব দেখে ইমাম বললেন, এ নিশ্চয় কোনও জারজ সন্তান। এতটুকু লজ্জাবােধ নেই, এরপর জানা গেল, তার কথাই সত্য। প্রকৃতই ছেলেটি এক অবৈধ সন্তান।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ধর্মনিষ্টা কিংবদন্তিতুল্য। একবার কোন এক লােক তার থেকে টাকা ধার নেয়। লােকটির বাড়ী যে পল্লীতে সেখানে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর এক শিষ্য মারা যায়। তিনি সেখানে গেলেন তার জানাযা আদায় করতে। তখন দুপুর। প্রচণ্ড গরম আর রােদও তত্র। সেখানে ঐ টাকা ধার গ্রহণকারীর দালানের ছায়া ছাড়া মাথা বাঁচানাের আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু সকলের অনুরােধ সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ ঐ জায়ায় গিয়ে দাঁড়ালেন না। বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কাউকে কিছু ধার দিয়ে তার থেকে কোন উপকার গ্রহণ করবে না। অতএব, তার দালানের ছায়ায় আরাম ভোগ করা ঠিক হবে না। কেননা, তা হবে সুদ গ্রহণের মতাে।
দাউদ তায়ী রহমাতুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ বিশ বছর ধরে তিনি তার সেবায় রত থেকেও তাকে প্রকাশ্যে বা গােপনে খালি মাথায় কখনও বসে থাকতে দেখেননি অথবা অবসন্ন অবস্থায় কোনদিন পা ছড়িয়ে বসেননি। যেখানে কোন লােকজন নেই, সেখানে একটু পা ছড়িয়ে বসলে কী? তার এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, সেখানেও আল্লাহর সঙ্গে শিষ্ঠাচার রক্ষা করা চাই।
প্রতি রাতে তিনি তিনশ রাকাআত নফল নামাজ পড়তেন। একদিন তার কানে এল, এক মহিলা অন্য এক মহিলাকে বলছেন, ইনি প্রতি রাতে পাঁচ’শ রাকাআত নফল নামাজ পড়েন। সেদিন থেকে তিনি পাঁচ’শ রাকাআত নফল নামাজ পড়তে শুরু করলেন। আবার একদিন তাকে দেখিয়ে কয়েকজন লােক বলাবলি করছিল, ইনি রােজ রাতে হাজার রাকআত নফল নামাজ আদায় করেন। সেদিন থেকে তিনি সত্যিই হাজার রাকআত নামাজ পড়তে লাগলেন। আরও কিছুদিন পর তার এক শিষ্য এসে বললেন, লােকের মুখে শুনা যায়, আপনি সারা রাত নামাজে কাটিয়ে দেন। সেদিন থেকে সত্যিই তিনি সারারাত নফল নামাজে রাত কাটাতে শুরু করলেন। আর তখন থেকে একটানা ত্রিশ বছর এশার অযুতে ফজর আদায় করতেন। মানুষের উচ্চ ধারণার কী অপরিসীম মূল্য তিনি দিয়েছেন।
হযরত দাউদ তায়ী রহমাতুল্লাহ যখন শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন তার কর্তব্য সম্বন্ধে তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর পরামর্শ চান। তিনি বলেন, এখন থেকে তােমার এলেম অনুযায়ী কাজ করা উচিত। কেননা, এলেমানুরূপ কাজ যে করে না, তার দেহ প্রাণহীন গােশত পিণ্ডের মতাে।
একদিন শহরের এক হাম্মামখানায় এক উলঙ্গ ব্যক্তিকে দেখে তিনি চোখ বুজে ফেলেন। লােকটি তাকে বলল, কবে থেকে আপনার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ উত্তর দেন, যেদিন থেকে তােমার হায়া- শরম ভুলে গেছ।
একদিন বাজারে যেতে তার কাপড়ে কিছু কাদামাটি লেগে গেল। তিনি তখনই নদীতে গিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। কেউ তাঁকে বললেন, আপনি যে পরিমাণ ময়লা জায়েয রেখেছেন, এতাে তার চেয়ে কম। না ধুলেও চলত। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি, ওটা ফতোয়ার কথা। আর যা করলাম তা পরহেজগারী। রাসূলে কারীম (সঃ) একদিন হযরত বেলাল (রাঃ)- কে বললেন, কোন সময় আধখানা রুটিও জমা করে রাখবে না। অথচ কোন এক সময় তিনি তার পত্নীদের জন্য প্রায় এক বছরের খাবারও জমা করে রেখেছিলেন।
এক ব্যক্তি ঈর্ষা-প্রণােদিত হয়ে হযরত ওসমান রহমাতুল্লাহ- কে ইহুদী বলত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) একদিন তাকে ডেকে বললেন, আপনার কণ্যার সঙ্গে অমুক ইহুদীর বিয়ে দেব। সে বলল, আপনি নিজে মুসলমান হয়ে ইহুদীর সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চান? ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বললেন, কেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাে ইহুদীর সঙ্গে দু’জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, লােকটি তার কথার মর্ম বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জিত হয়ে তার কাছে তওবা করে ক্ষমা চেয়ে নিল। একদিন এক ধনী ব্যক্তিকে তার ধন সম্পদের জন্যই তিনি একটু বেশ সম্মান দেখান। কিন্তু পরে অনুতপ্ত হয়ে এক হাজার বার কোরআন শরীফ খতম করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি আরও একটি নিয়ম পালন করতেন। কোন কঠিন মাসআলার সম্মুখীন হলে চল্লিশ বার পবিত্র কোরআন খতম করে সমাধানে রত হতেন।
তৎকালীন খলীফা রাতে স্বপ্ন দেখলেন, আজরাইল ফেরেশতাকে তার আয়ুর কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে দেখালেন। বিভিন্ন গণ্ডিতের কাছের স্বপ্নের ব্যাখ্যা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি হযরত আবু হানিফা রহমাতুল্লাহকে ধরলেন। তিনি বললেন, পাঁচটি আঙ্গুল দ্বারা পাঁচটি বিষয়ের ইঙ্গিত করা হয়েছে- যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। সেগুলি হলঃ
(১) কিয়ামত কবে হবে, (২) বৃষ্টি কখন হবে, (৩) কয়টি সন্তান হবে (৪) কোন্ জায়গায় কার মৃত্যু হবে ও (৫) আগামীকাল কী ঘটবে।
হযরত আবু আলী রহমাতুল্লাহ বলেন, তিনি এক রাতে হযরত বেলাল রহমতুল্লাহ -এর কবরের পাশে শুয়েছিলেন। সে রাতে স্বপ্ন দেখেন, তিনি যেন মক্কায় আছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বৃদ্ধকে শিশুর মতাে কোলে নিয়ে বনী শায়বা দরজা দিয়ে বের হয়ে এলেন। তিনি তাড়াতাড়ি গিয়ে তার কদমবুসি করলেন। তিনি তখন অবাক হয়ে ভাবছিলেন নবী করীমের কোলে কে এই বৃদ্ধ? নবীজী বললেন, ইনি মুসলিমদের ইমাম আবু হানিফ। নওফেল ইবনে হাইয়ান বলেন, ইমাম আবু হানিফা এর মৃত্যুর পর তিনি স্বপ্ন দেখেন কিয়ামত হয়ে গেছে। সমস্ত মানুষ হাশরের মাঠে হাজির। রাসূলে কারীম (সঃ) দাড়িয়ে আছেন হাওজে কাওসারের কাছে। তার ডানে-বামে প্রচুর বিজ্ঞানীর ভিড়। তিনি দাড়িয়ে আছেন মহানবীর দিকে মুখ করে। ইমাম সাহেব রয়েছেন তাঁর পাশে। আমি তাকে সালাম করে বললাম, আমাকে একটু পানি পান করান। তিনি জবাব দিলেন, নবীজী নির্দেশ দিলে পানি দিতে পারি , রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নির্দেশে আমাকে পানি দেওয়া হল। পানি পান করে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পাশে উনি কে পঁড়িয়ে আছেন? তিনি বললেন, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর বাম পাশে হযরত আবু বকর (রাঃ)। তারপর একে একে অন্যান্য বিশিষ্ট জনের পরিচয় নিয়ে আঙ্গুলের করে গুনে হিসাব করতে লাগলাম। আমি সতেরাে জনের নাম শুনলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম আমার বুড়ো আঙুলটি করের সতেৱাে দাগেই রয়েছে।