Select Page

জ্ঞানার্জনঃ শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। শেষ আছে ভেবে আমরা মাথামোটা কেউ কেউ নিজেকে জ্ঞানী ভাবতেই পারি, যা বোকার রাজ্যে বসতী করে বদ্ধগারদে আবদ্ধ হয়ে নিজের অজ্ঞতা ও অহমিকার চর্চা মাত্র।
বদ্ধদ্বারে আবদ্ধ এই জীবগুলী হয় পশু, না হয় দেবতা। যেহেতু সমাজ সভ্যতা আমাদের মূল্যায়ন করছে না, অর্চনা বা পূজা করছে না, তাহলে এটা নিশ্চিত আমরা দেবতা নই। হয়তো মানুষরূপে পশুত্বে আবৃত বা আবদ্ধ হচ্ছি। নতুবা অভিশপ্ত ও অশুভ শক্তি প্রেতাত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষরূপে তারই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছি।

কথায় বলে, ফকিরের পায়ে লক্ষ্মী, পুরাতন প্রবাদ বলে, যেখানে দেখিবে ছাই উড়িয়ে দেখিবে তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।
যদিও সকল ছাইয়ের স্তূপে অমূল্য রতন পাওয়া যায়নি। তবুও থেমে থাকেনি জ্ঞান পিপাসু সাধক ফকিরের পদচারণা, নৈরাশ্য হয়নি অন্বেষনে ব্রত তপস্যারত কাঙ্গালীরা, বিফল হয়নি সৃষ্টিশীলতা, মেধা ও মননের শতস্ফূর্ত বিকশিকতা।
তবুও তারা অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেই ছুটে চলেন সংগ্রহের অন্বেষায়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাস্তবতায়, উঁচু তলা থেকে নিচু তলায়। সর্বত্র।

প্রকৃতার্থে, জ্ঞানার্জনে বা সংগ্রহে যারা ব্রত, তাদের কাছে সংকীর্ণতা, সীমাবদ্ধতা ও উঁচুনিচু ভেদাভেদ বা মানসিকতা থাকবে না। তারা ত্যাগী বিনয়ী, ধৈর্য্যশীল ও কষ্টসহিষ্ণু জ্ঞান পিপাসু। নতুনত্ব, সৃষ্টি, সংগ্রহ ও অর্জনই তাদের প্রতিপাদ্য বিষয়।
ভাল কোন বিষয় বা পরিবেশ থেকে যতটা বাস্তবিক জ্ঞানার্জন সম্ভব, তারচেয়ে বেশী বাস্তবিক জ্ঞানার্জন সম্ভব মন্দ কোন বিষয় কিংবা নোংরা কোন পরিবেশ থেকে, যা অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য ও অর্জন বা ধারনাপ্রসূত।
সাত তলায় বসত করে নিচ তলার পরিবেশ বুঝে উঠা কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই অর্জনের স্বার্থে অন্তত সমভাবে বসতী স্থাপন, যাতায়াত ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। যা মূলতঃ অন্বেষণ বা অর্জনের প্রচেষ্টা মাত্র।
ক্ষুদ্র মৌমাছি অক্লান্ত পরিশ্রম করে মধু সংগ্রহ করে, যা আমরা সুমিষ্টি স্বাদ গ্রহন করি। বিভিন্ন ফুল ফলের পাশাপাশি, সে বিভিন্ন নোংরা নর্দমা, পচাঁবাসী ও আবর্জনা থেকেও রস বা মধু সংগ্রহ করে থাকে। আমরা তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার মূল্যবান ধন খাঁটি মধু চড়াদামে সংগ্রহ করি, তৃপ্তি ও স্বাদ উপভোগ বা গ্রহন করি।
শিক্ষা, জ্ঞানার্জন বা অন্বেষণের বিষয়টিও মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমের ধন বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহের মতোই ত্যাগী ও সৃষ্টিশীল মানসিকতা। শুধু ফুল ফল থেকে যেমন মধু সংগ্রহ যথেষ্ট নয়, তেমনি সংকীর্ণ বা সীমাবদ্ধ কোন সমাজ বা পরিবেশ থেকে জ্ঞানার্জন বা সংগ্রহ পর্যাপ্ত নয়। সমাজের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিন্ম শ্রেণীর সর্বত্রই আহরণ ও সংগ্রহের পরিবেশ বিদ্যমান রয়েছে। শুধু নির্ধারিত একটি শ্রেণী বা সমাজ থেকে আংশিক, সীমিত বা সীমাবদ্ধ অর্জন বা সংগ্রহ সম্ভব। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন সমাজ, পরিবেশ ও জাতিগোষ্ঠীর কাছ থেকে সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধতা পেড়িয়ে সীমাহীন ও পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন, আহরণ ও সংগ্রহ সম্ভব। যা বিশ্বব্যাপী।
তাই বোকার রাজ্যের বসতী ত্যাগ করে, আমাদের হিংসা ও অহমিকা পরিহার করে, বেড়িয়ে পড়তে হবে জ্ঞানার্জনে, সংগ্রহ ও অন্বেষণে।
সৃষ্টিশীলতা ও মেধার সমন্বয়ে দূরীভূত হবে আমাদের পশুত্ব, অজ্ঞতা, সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা।
আমরা হবো নন্দিত, প্রশংসিত ও উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী উন্নত জাতি। বিকশিত হবে মানবতাবোধ, জনকল্যাণ ও শান্তি।
জাগ্রত হবে বিবেক, বিবেচনাবোধ ও মনুষ্যত্ব।
———–
ধন্যবাদান্তে-
শারফিন চৌধুরী রিয়াজ।
তাং ১৩/১০/২০১৭ ইং।