পুরুষ ও নারীদের শরীরে সুখ দুঃখ এর লক্ষণ বা চিহ্ন।
হাতের রেখা দেখে ভাগ্য গণনাঃ পুরুষ জাতীর বিভিন্ন লক্ষণ ও চিহ্ন বর্ণনা।
নারীর লক্ষণ-অলক্ষণের বিচার যেমন করা হলাে, তেমনি আবার পুরুষ জাতীর শরীরেও এমন সব চিহ্ন আছে যা দেখে তাদের সুখ বা দুঃখ কিংবা তাদের ভাগ্য কেমন হবে—তাদের জীবনে উন্নতি সম্ভব হবে না অবনতি ঘটবে তা বলা যায়। অনেকে আজকাল হয়ত এ সব চিহ্নে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতা ঘটতে থাকলে তারা এ সব বিশ্বাস করতে বাধ্য হন। পুরুষ বা নারীর হয়ত বিরাট উচ্চকুলে জন্ম—কিন্তু তারা তাদের দেহের বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী ভাগ্য লাভ করে। তাই লক্ষপতির ঘরে জন্ম নিলেও কত লােক – যারা নানান ধরনের কুলক্ষণযুক্ত—তারা ধীরে ধীরে সমস্ত অর্থ নিঃশেষ করে জীবনে অশেষ কষ্ট পায়।।
আবার হয়ত কোন লােক খুব গরীব বা মধ্যবিত্ত ঘরে তার জন্ম, সে নিজের চেষ্টায়, উদ্যমে, ভাগ্যে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে ধনে, মানে, প্রতিষ্ঠায় সমাজে শ্রেষ্ঠ লােক বলে নিজেদের পরিচয় দিতে পারে। তাই কোন লােক তার মেয়ের বিবাহাদির জন্য যদি পাত্র খুঁজতে যায়, তবে শুধু বংশ বা চেহারা দেখে বিচার করলেই হবে না, পুরুষ জাতির নানা কুচিহ্ন তার দেহে বর্তমান কিনা তা দেখা একান্ত আবশ্যক। আমরা জানি, স্বদেশে ও বিদেশে এমন হাজার হাজার লােক ছিলেন যারা নিতান্ত গরীব হয়েও জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হয়েছেন।
সেক্সপীয়র ছিলেন ঘােড়ার গাড়ির কোচম্যান, ষ্ট্যালিন ছিলেন কামারের ছেলে, হিটলার মুচির ছেলে, মোপাসা পতিতার পুত্র। আমাদের দেশেও শরৎচন্দ্র, আলামােহন দাস, স্যার জেমসেদজী টাটা, কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রভৃতি অজস্র মনীষী ও শ্রেষ্ঠ ধনী নিতান্ত গরীবের ঘরে জন্মেছিলেন
তাই ভাগ্য বা সুখ সৌভাগ্যের পরিবর্তনে মানুষের বিশ্বাসী হওয়া অবশ্যই উচিত। আমাদের শাস্ত্রে আরও আছে—
স্ত্রীয়াশ্চরিত্রং পুরুষ ভাগ্যং।
দেবাঃ ন জানন্তি কুততা মনুষ্যাঃ ।।
কোন পুরুষের ভাগ্যে যে কি আছে, তা দেবতারা পর্যন্ত জানতে বা বলতে পারেন না। তাই সুখ-দুঃখ-সৌভাগ্য ইত্যাদির চিহ্ন যে অনেকটা এ বিষয়ে পূর্বাহ্নে শুভ সূচনা করে সে কথা অবশ্য স্বীকার্য।
মহাদেব অতঃপর পুরুষজাতির ভাগ্য ও সুখ-দুঃখের যে বর্ণনা দিলেন তা একে একে বলা হচ্ছে।
যে লােকের কণ্ঠস্বর, বুদ্ধি ও নাভি গভীর হয় তাকে সুখী ও সুলক্ষণযুক্ত বলে জানবে। অর্থাৎ সে লােকের গলার স্বর বেশ ভারী হয়, বুদ্ধি বেশ ধীরস্থির এবং বেশ ভালভাবে অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে সে কোনও কাজ করে না, আর তার নাভির গর্ত বেশ গভীর থাকে ।। এ ছাড়া যার বুক, শির ও ললাট (কপাল) প্রশস্ত, সেও লক্ষ্মীবান পুরুষ বলে বর্ণিত হয়েছে।
স্বরে বুদ্ধিশ্চ নাভিশ্চ ত্রিগম্ভীরমুদাহৃতম।
এব যস্য বিস্তীর্ণং তস্য শ্ৰীঃ সব্বততামুখী।
উরঃ শিরাে ললাটঞ্চ ত্রিবিস্তীর্ণং প্রশস্ততে।
তারপর অন্য আর ও কতক গুলি লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে।
যে পুরুষের কটিদেশ বিশাল (বেশ চওড়া যার কোমর ও নিতম্ব), সে বহু পুত্র লাভ করে থাকে যে পুরুষের বাহু সুদীর্ঘ ( অনেক সময় আজানুলম্বিত বাহু বলে শ্রেষ্ঠ পুরুষদের বর্ণনা করা হয় ), সে নরশ্রেষ্ঠ ও সুখ সম্পন্ন হয়ে পরম শান্তি ও আনন্দে দিন কাটাতে পারে। যে পুরুষের বক্ষদেশ বিশাল—অর্থাৎ যার বুক বেশ চওড়া ধরনের সে পুরুষ ধনধান্যযুক্ত হন। সাংসারিক সর্ববিষয়ে তার ভাগ্য ভাল দেখা যায়।। যে পুরুষের শিরােদেশ বিশাল ( অর্থাৎ মাথা যার বড় ), সে নরলােকে সর্বত্র পূজা পায়। এই পুরুষরা সর্বত্র সুমেধা ও নিজ কীর্তির মহত্বের জন্যে সকলের কাছে পূজনীয় হয় এবং সকলেই তাদের গুণের জন্য তাদের শ্রদ্ধা ভক্তি করেন।
কটিবিশাল বহুপুত্ৰভাগী।
বিশালহন্তো নর-পুঙ্গবঃ স্যাৎ।
উরে বিশালং ধনধান্যভােগী
শিরে বিশালং নরপূজিতঃ স্যাৎ৷৷
অতঃপরে আরও কতকগুলি পুরুষজাতির লক্ষণ বর্ণনা করা হচ্ছে। এগুলি সব সুচিহ্ন।
যে পুরুষ বিশেষ কঠিন কাজকর্ম করে না, অথচ তার হাতদুটি হয় শক্ত ও কঠোর, অনেক পথ চলেও যার পা দুটি থাকে কোমল, আর যে পুরুষের করতল রক্তবর্ণ অর্থাৎ লালচে রঙের হয়, সেই পুরুষ যে সুখী হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
অকৰ্ম্ম কঠিনৌ হস্তৌ পদাবন্ধনি কোমলো।
যস্য পাণিতলৌ রক্তৌ স সুখী নাত্ৰ সংশয়ঃ ।
যে পুরুষের শিক্ষাগ্র অর্থাৎ লিঙ্গের অগ্রভাগ স্থুল হয় সে সুখী হয়। যে পরুষের শিশ্ন দীর্ঘ বা অনেক বেশী লম্বা সে দুঃখ পায়, যে পুরুষের শিশ্ন চোট কিন্তু কৃশ হয় সে সৌভাগ্য লাভ করে থাকে।
সুলশিশ্নঃ সুখী চৈব দীর্ঘাশিশ্নশ্চ দুঃখিত।
কৃশশিশ্নশ্চ সৌভাগ্যলক্ষণং নাত্ৰ সংশয়ঃ ৷৷
যে পুরুষের নেত্র (চোখদুটি ) স্নিগ্ধ—অর্থাৎ যার দুটি চোখের দৃষ্টি কোমল ও সুন্দর, সে সুখ ও সৌভাগ্যশালী হয়ে থাকে। যে পুরুষের দন্ত স্নিগ্ধ অর্থাৎ চক্চকে ও সুন্দরভাবে সাজান সে উত্তম ভােজন করে থাকে। যে পুরুষের হস্ত স্নিগ্ধ অর্থাৎ যার হাত সুঠাম ও সুদৃশ্য হয় সে ঐশ্বৰ্য্যাশালী হয়ে থাকে । যে পুরুষের পদদ্বয় স্নিগ্ধ অর্থাৎ যার দুটি পা সুঠাম, কোমল ও সুদর্শন, দে। নানা যানবাহনের অধিকারী হয়ে থাকে।
সৌভাগ্যং লভতে নূনং নেত্রসেহ-সমাম্বিতঃ।।
উত্তমং ভােজনং চৈব দম্ভ-স্নেহ-যুত হি।।
হস্তস্নেহেন চৈশ্বৰ্য্যং পাদস্নেহেন বাহনম ৷৷
এবারে সবচেয়ে সুখ ঐশ্বৰ্য্য ও সম্পদযুক্ত পুরুষের একটি বিশেষ লক্ষণ এখানে বলা হচ্ছে। ও ঐশ্বৰ্য একাধারে কেউ উপভােগ বলা হচ্ছে। দুটি ব্রুর মধ্যে কপালে যদি কোনও পুরুষের রক্তবর্ণ অর্থাৎ লাল রঙের রেখা থাকে, তবে সে সব ঐশ্বর্যযুক্ত ও অতুলনীয় সুখের অধিকারী হয়ে থাকে। পৃথিবীর মধ্যে তেমন পুরুষের মত সুখ ও ঐশ্বৰ্য একাধারে কেউ করতে পারে না। এই চিহ্ন অত্যন্ত সুলক্ষণযুক্ত। কিন্তু এখানে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এ রেখাটি সম্পূর্ণ নিচের থেকে ওপর পর্যন্ত আগাগােড়া হবে।। আগাগােড়া লালবর্ণ হতে হবে। যদি তা না হয়ে এই রেখার উপরের দিকের কিছুটা অংশ নীলবর্ণ হয় বা নীল আভা বের হয়, তাহলে সে পরুষ জীবনে কখনও সুখলাভ করে না।।
বাের্মধ্যে চ যা রেখ। রক্তবর্ণ ভাবেদঘদি।
সবৈ শ্বৰ্য্য সম যুক্তঃ স সুখী নাজ সংশয়ঃ ।।
তস্যাদ্ধে যদি রেখা স্যাৎ নীলবর্ণ। চ দীর্ঘিকা।
ন সুখং লভতে কাপি ইতি শাস্ত্রবিনির্ণয়ঃ ।
মহাদেব অতঃপর রতিশাস্ত্রে সুখদুঃখের আরও নানা চিহ্ন একে একে বর্ণনা করে চললেন।
যদি কোন পুরুষের নাকের অগ্রভাগে বতুলাকার (বােতলের মত গােল ) চিহ্ন থাকে এবং সেই চিহ্ন যদি কিছু শুরু অর্থাৎ সাদা রঙের আভাযুক্ত হয় তাহলে সেই পুরুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন পরম সুখে দিন যাপন করে। জীবনে কখনও কোনও অভাব বা অশান্তি এসে তাদের ক্লেশ দিতে পারে না। যে লােকের কপালে শুক্ল রেখা অর্থাৎ সাদা রঙের রেখা দেখা যায় সেই পুরুষ আজীবন পরম সুখে দিন কাটায়—জীবনে কখনও কষ্ট পায় না। কামশাস্ত্রে এইসব সুখলক্ষণগুলি যা লেখা আছে তা কখনও মিথ্য হয় না।
বা লাকার চিহ্নঞ্চ নাসাগ্রে যদি দৃশ্যতে।।
কিঞ্চিৎ শুক্লঞ্চ তচিহ্নগ্ধ সুখী নাত্ৰ সংশয়ঃ ।।
ললাটে যদি জায়তে শুক্লরেখা নরস্য চ।।
সুখিনং তং বিজানীয়াৎ কথিতং কামশাস্ত্রিণা।
এতক্ষণ ধরে মহাদেব পুরুষের সুখ, সৌভাগ্যের কতকগুলি রেখা বর্ণনা করলেন। এবারে তিনি এমন কতকগুলি চিহ্ন বর্ণনা করলেন, যা থাকলে মানুষ জীবনভাের দুঃখভােগ করে থাকে। যে পুরুষের চোখের উপর অর্থাৎ চোখের উপরের পাতার উপরিভাগে গৌরবর্ণ রেখা দেখা যায়, নিঃসংশয়ে সে পুরুষ আজীবন দুঃখভােগ করবে। যে পুরুষের নাসামূলে অর্থাৎ গােড়ার দিকে পীতবর্ণ অর্থাৎ হলদে রঙের চিহ্ন দেখা যায়, সে আজীবন দুঃখভােগ করে এতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।
গৌররূপা চ যা রেখা যদি স্যাৎ নেত্রসংস্থিতা।
দুঃখভােগী ভবেচ্চৈব নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।
নাসামুলে চ যৎ চিহ্নং দৃশ্যতে পীতবর্ণকম।
তঞ্চ দুঃখস্য মূলং স্যাৎ নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।
এ ছাড়া যদি কোন পুরুষের অধরে অর্থাৎ ঠোটে অরুণবর্ণ অর্থাৎ টকটকে লাল চিহ্ন থাকে, তবে তার সারা জীবন দুঃখের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে। যদি কোনও পুরুষের অঙ্কুষ্ঠের মুলদেশে কৃষ্ণবর্ণ রেখা দেখা যায় তাহলে সেই পুরুষ যতদিন জীবিত থাকে, দুঃখে শােকে তার কাল অতিবাহিত হয়ে থাকে। যদি কোনও পুরুষের করতলে মৎস্যপুচ্ছের চিহ্ন থাকে— সেই চিহ্ন সুখ ও ধর্মময় জীবনের লক্ষণ। কিন্তু সেই মৎস্যপুচ্ছের নিম্নভাগে বার্তুলাকার ধূম্রবর্ণ চিহ্ন থাকলে সেটি খুব খারাপ। যতদিন সে বেঁচে থাকে খুব দুঃখে তার দিন অতিবাহিত হয়।
যদি স্যাদারুণং বর্ণং চিহ্নং কস্যাপি চাধরে।
তদা তস্য বিজানীয়াৎ জীবনং দুঃখমূলকম ।
অষ্ঠমূলমধ্যে যা বেখ। স্যাৎ কৃষ্ণবণিকা।।
দুঃখমূলং হি তস্য স্যাৎ জীবনং নাত্ৰ সংশয়ঃ ।।
মীনপুচ্ছসমীপে চ যস্য চিহ্নং ব্ৰজত থঃ।।
বক্ৰাকৃতিঃ ধূম্রবর্ণং দুঃখেন তস্য জীবনম।
যদি কোন পুরুষের তর্জনীর অগ্রভাগে অর্থাৎ তর্জনীর আগায় গােলাকার চিহ্ন দেখা যায় তাহলে সে কখনাে সুখে কখনও বা সুখে দিনযাপন করে। তার জীবন মধ্যম ধরনের হয়।