Select Page
মানবতাবাদী কবিতা

মানবতাবাদী কবিতা

মানবতাবাদী কবিতা

এস এম জাছিম

উপোসে কাদি, নির্বিকার নিরবধি জল আসে না চোখে, জানি এ শহর, বড়োই স্বার্থপর পর-ও অশ্রুজল কে দেখে?

বিশাল এ ভুবন, বিশাল ও কৃপণ,

অসহায়ের ঠাঁই ফিকে,

বাবুসাহেবদের ঘর, কতগুলো অবসর

বারান্দায় লুকিয়ে ঘুমাই দেখলে হাঁকে!

নেই কোন হুঁশ, চিনে না মানুষ, শহরীয়’র মগজ বরবাদ, ভুক্তাবশেষ, মোরে দিলে বেশ! কুকুর খায় পায় মাংসের ও স্বাদ

এ শহরে হায়, বধির স্বীকৃতি পায়,

এমন বিত্তবানের জাত;

আছে দুই ‘কান’, শুনে সুখের গান

শুনে না অসহায়দের আর্তনাদ!

মানবতাবাদী কবিতা

ভালোবাসা মানে কি? ভালোবাসা কাকে বলে?

ভালোবাসা মানে কি? ভালোবাসা কাকে বলে?

 ভালোবাসা মানে কি? একজন পুরুষ একটি মেয়েকে ভালবাসে। সে একাই তাহাকে পরিপূর্ণ ভাবে ভোগ করিতে চায়; তাহার প্রতিটি গতিবিধি সম্বন্ধে পুরুষটির মনে ঈর্ষার উদয় হয়। সে চায়-মেয়েটি তাহার কাছে বসুক, তাহার কাছে দাঁড়াক, তাহার ইঙ্গিতে খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা প্রভৃতি সব কাজ করুক। সে ঐ মেয়েটির ক্রীতদাস, এবং মেয়েটিকেও নিজের দাসী করিয়া রাখিতে চায়। ইহা ভালবাসা নয়, ইহা একপ্রকার দাসসুলভ অনুরাগের বিকার। ভালবাসার মতো দেখাইতেছে, বস্তুতঃ ইহা ভালবাসা নয়। উহা ভালবাসা হইতে পারে না, কারণ উহা যন্ত্রণাদায়ক। যদি মেয়েটি তাহার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ না করে, তবে তাহার কষ্ট হইবে। ভালবাসায় কোন দুখঃকর প্রতিক্রিয়া নাই। ভালবাসার প্রতিক্রিয়ায় কেবল আনন্দই হইয়া থাকে। ভালবাসিয়া যদি আনন্দ না হয়, তবে উহা ভালবাসা নয়; অন্য কিছুকে আমরা ভালবাসা বলিয়া ভুল করিতেছি। যখন তুমি তোমার স্বামীকে, স্ত্রীকে,পুত্রকন্যাকে, সমুদয় পৃথিবীকে, বিশ্বজগৎকে এমনভাবে ভালবাসিতে সমর্থ হইবে যে, তাহাতে কোনরূপ দুঃখ ঈর্ষা বা স্বার্থপরতার প্রতিক্রিয়া হইবে না, তখনই তুমি প্রকৃতপক্ষে অনাসক্ত হইতে পারিবে। স্বামী বিবেকানন্দ। ভালোবাসা মানে কি?

 

হাতের রেখা দেখে ভাগ্য গণনা। শরীরে সুখ দুঃখ এর লক্ষণ বা চিহ্ন।

হাতের রেখা দেখে ভাগ্য গণনা। শরীরে সুখ দুঃখ এর লক্ষণ বা চিহ্ন।

পুরুষ ও নারীদের শরীরে সুখ দুঃখ এর লক্ষণ বা চিহ্ন।

হাতের রেখা দেখে ভাগ্য গণনাঃ পুরুষ জাতীর বিভিন্ন লক্ষণ ও চিহ্ন বর্ণনা। 

নারীর লক্ষণ-অলক্ষণের বিচার যেমন করা হলাে, তেমনি আবার পুরুষ জাতীর শরীরেও এমন সব চিহ্ন আছে যা দেখে তাদের সুখ বা দুঃখ কিংবা তাদের ভাগ্য কেমন হবে—তাদের জীবনে উন্নতি সম্ভব হবে না অবনতি ঘটবে তা বলা যায়। অনেকে আজকাল হয়ত এ সব চিহ্নে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতা ঘটতে থাকলে তারা এ সব বিশ্বাস করতে বাধ্য হন। পুরুষ বা নারীর হয়ত বিরাট উচ্চকুলে জন্ম—কিন্তু তারা তাদের দেহের বিভিন্ন লক্ষণ অনুযায়ী ভাগ্য লাভ করে। তাই লক্ষপতির ঘরে জন্ম নিলেও কত লােক – যারা নানান ধরনের কুলক্ষণযুক্ত—তারা ধীরে ধীরে সমস্ত অর্থ নিঃশেষ করে জীবনে অশেষ কষ্ট পায়।।

আবার হয়ত কোন লােক খুব গরীব বা মধ্যবিত্ত ঘরে তার জন্ম, সে নিজের চেষ্টায়, উদ্যমে, ভাগ্যে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে ধনে, মানে, প্রতিষ্ঠায় সমাজে শ্রেষ্ঠ লােক বলে নিজেদের পরিচয় দিতে পারে। তাই কোন লােক তার মেয়ের বিবাহাদির জন্য যদি পাত্র খুঁজতে যায়, তবে শুধু বংশ বা চেহারা দেখে বিচার করলেই হবে না, পুরুষ জাতির নানা কুচিহ্ন তার দেহে বর্তমান কিনা তা দেখা একান্ত আবশ্যক। আমরা জানি, স্বদেশে ও বিদেশে এমন হাজার হাজার লােক ছিলেন যারা নিতান্ত গরীব হয়েও জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হয়েছেন।

সেক্সপীয়র ছিলেন ঘােড়ার গাড়ির কোচম্যান, ষ্ট্যালিন ছিলেন কামারের ছেলে, হিটলার মুচির ছেলে, মোপাসা পতিতার পুত্র। আমাদের দেশেও শরৎচন্দ্র, আলামােহন দাস, স্যার জেমসেদজী টাটা, কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রভৃতি অজস্র মনীষী ও শ্রেষ্ঠ ধনী নিতান্ত গরীবের ঘরে জন্মেছিলেন

তাই ভাগ্য বা সুখ সৌভাগ্যের পরিবর্তনে মানুষের বিশ্বাসী হওয়া অবশ্যই উচিত। আমাদের শাস্ত্রে আরও আছে—

স্ত্রীয়াশ্চরিত্রং পুরুষ ভাগ্যং।

দেবাঃ ন জানন্তি কুততা মনুষ্যাঃ ।।

কোন পুরুষের ভাগ্যে যে কি আছে, তা দেবতারা পর্যন্ত জানতে বা বলতে পারেন না। তাই সুখ-দুঃখ-সৌভাগ্য ইত্যাদির চিহ্ন যে অনেকটা এ বিষয়ে পূর্বাহ্নে শুভ সূচনা করে সে কথা অবশ্য স্বীকার্য।

মহাদেব অতঃপর পুরুষজাতির ভাগ্য ও সুখ-দুঃখের যে বর্ণনা দিলেন তা একে একে বলা হচ্ছে।

যে লােকের কণ্ঠস্বর, বুদ্ধি ও নাভি গভীর হয় তাকে সুখী ও সুলক্ষণযুক্ত বলে জানবে। অর্থাৎ সে লােকের গলার স্বর বেশ ভারী হয়, বুদ্ধি বেশ ধীরস্থির এবং বেশ ভালভাবে অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে সে কোনও কাজ করে না, আর তার নাভির গর্ত বেশ গভীর থাকে ।। এ ছাড়া যার বুক, শির ও ললাট (কপাল) প্রশস্ত, সেও লক্ষ্মীবান পুরুষ বলে বর্ণিত হয়েছে।

স্বরে বুদ্ধিশ্চ নাভিশ্চ ত্রিগম্ভীরমুদাহৃতম।

এব যস্য বিস্তীর্ণং তস্য শ্ৰীঃ সব্বততামুখী।

উরঃ শিরাে ললাটঞ্চ ত্রিবিস্তীর্ণং প্রশস্ততে।

তারপর অন্য আর ও কতক গুলি লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে।

যে পুরুষের কটিদেশ বিশাল (বেশ চওড়া যার কোমর ও নিতম্ব), সে বহু পুত্র লাভ করে থাকে যে পুরুষের বাহু সুদীর্ঘ ( অনেক সময় আজানুলম্বিত বাহু বলে শ্রেষ্ঠ পুরুষদের বর্ণনা করা হয় ), সে নরশ্রেষ্ঠ ও সুখ সম্পন্ন হয়ে পরম শান্তি ও আনন্দে দিন কাটাতে পারে। যে পুরুষের বক্ষদেশ বিশাল—অর্থাৎ যার বুক বেশ চওড়া ধরনের সে পুরুষ ধনধান্যযুক্ত হন। সাংসারিক সর্ববিষয়ে তার ভাগ্য ভাল দেখা যায়।। যে পুরুষের শিরােদেশ বিশাল ( অর্থাৎ মাথা যার বড় ), সে নরলােকে সর্বত্র পূজা পায়। এই পুরুষরা সর্বত্র সুমেধা ও নিজ কীর্তির মহত্বের জন্যে সকলের কাছে পূজনীয় হয় এবং সকলেই তাদের গুণের জন্য তাদের শ্রদ্ধা ভক্তি করেন।

কটিবিশাল বহুপুত্ৰভাগী।

বিশালহন্তো নর-পুঙ্গবঃ স্যাৎ।

উরে বিশালং ধনধান্যভােগী

শিরে বিশালং নরপূজিতঃ স্যাৎ৷৷

অতঃপরে আরও কতকগুলি পুরুষজাতির লক্ষণ বর্ণনা করা হচ্ছে। এগুলি সব সুচিহ্ন।

যে পুরুষ বিশেষ কঠিন কাজকর্ম করে না, অথচ তার হাতদুটি হয় শক্ত ও কঠোর, অনেক পথ চলেও যার পা দুটি থাকে কোমল, আর যে পুরুষের করতল রক্তবর্ণ অর্থাৎ লালচে রঙের হয়, সেই পুরুষ যে সুখী হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

অকৰ্ম্ম কঠিনৌ হস্তৌ পদাবন্ধনি কোমলো।

যস্য পাণিতলৌ রক্তৌ স সুখী নাত্ৰ সংশয়ঃ ।

যে পুরুষের শিক্ষাগ্র অর্থাৎ লিঙ্গের অগ্রভাগ স্থুল হয় সে সুখী হয়। যে পরুষের শিশ্ন দীর্ঘ বা অনেক বেশী লম্বা সে দুঃখ পায়, যে পুরুষের শিশ্ন চোট কিন্তু কৃশ হয় সে সৌভাগ্য লাভ করে থাকে।

সুলশিশ্নঃ সুখী চৈব দীর্ঘাশিশ্নশ্চ দুঃখিত।

কৃশশিশ্নশ্চ সৌভাগ্যলক্ষণং নাত্ৰ সংশয়ঃ ৷৷

যে পুরুষের নেত্র (চোখদুটি ) স্নিগ্ধ—অর্থাৎ যার দুটি চোখের  দৃষ্টি কোমল ও সুন্দর, সে সুখ ও সৌভাগ্যশালী হয়ে থাকে। যে পুরুষের দন্ত স্নিগ্ধ অর্থাৎ চক্চকে ও সুন্দরভাবে সাজান সে উত্তম ভােজন করে থাকে। যে পুরুষের হস্ত স্নিগ্ধ অর্থাৎ যার হাত সুঠাম ও সুদৃশ্য হয় সে ঐশ্বৰ্য্যাশালী হয়ে থাকে । যে পুরুষের পদদ্বয় স্নিগ্ধ অর্থাৎ যার দুটি পা সুঠাম, কোমল ও সুদর্শন, দে। নানা যানবাহনের অধিকারী হয়ে থাকে।

সৌভাগ্যং লভতে নূনং নেত্রসেহ-সমাম্বিতঃ।।

উত্তমং ভােজনং চৈব দম্ভ-স্নেহ-যুত হি।।

হস্তস্নেহেন চৈশ্বৰ্য্যং পাদস্নেহেন বাহনম ৷৷

এবারে সবচেয়ে সুখ ঐশ্বৰ্য্য ও সম্পদযুক্ত পুরুষের একটি বিশেষ লক্ষণ এখানে বলা হচ্ছে। ও ঐশ্বৰ্য একাধারে কেউ উপভােগ বলা হচ্ছে। দুটি ব্রুর মধ্যে কপালে যদি কোনও পুরুষের রক্তবর্ণ অর্থাৎ লাল রঙের রেখা থাকে, তবে সে সব ঐশ্বর্যযুক্ত ও অতুলনীয় সুখের অধিকারী হয়ে থাকে। পৃথিবীর মধ্যে তেমন পুরুষের মত সুখ ও ঐশ্বৰ্য একাধারে কেউ করতে পারে না। এই চিহ্ন অত্যন্ত সুলক্ষণযুক্ত। কিন্তু এখানে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এ রেখাটি সম্পূর্ণ নিচের থেকে ওপর পর্যন্ত আগাগােড়া হবে।। আগাগােড়া লালবর্ণ হতে হবে। যদি তা না হয়ে এই রেখার উপরের দিকের কিছুটা অংশ নীলবর্ণ হয় বা নীল আভা বের হয়, তাহলে সে পরুষ জীবনে কখনও সুখলাভ করে না।।

বাের্মধ্যে চ যা রেখ। রক্তবর্ণ ভাবেদঘদি।

সবৈ শ্বৰ্য্য সম যুক্তঃ স সুখী নাজ সংশয়ঃ ।।

তস্যাদ্ধে যদি রেখা স্যাৎ নীলবর্ণ। চ দীর্ঘিকা।

ন সুখং লভতে কাপি ইতি শাস্ত্রবিনির্ণয়ঃ ।

মহাদেব অতঃপর রতিশাস্ত্রে সুখদুঃখের আরও নানা চিহ্ন একে একে বর্ণনা করে চললেন।

যদি কোন পুরুষের নাকের অগ্রভাগে বতুলাকার (বােতলের মত গােল ) চিহ্ন থাকে এবং সেই চিহ্ন যদি কিছু শুরু অর্থাৎ সাদা রঙের আভাযুক্ত হয় তাহলে সেই পুরুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন পরম সুখে দিন যাপন করে। জীবনে কখনও কোনও অভাব বা অশান্তি এসে তাদের ক্লেশ দিতে পারে না। যে লােকের কপালে শুক্ল রেখা অর্থাৎ সাদা রঙের রেখা দেখা যায় সেই পুরুষ আজীবন পরম সুখে দিন কাটায়—জীবনে কখনও কষ্ট পায় না। কামশাস্ত্রে এইসব সুখলক্ষণগুলি যা লেখা আছে তা কখনও মিথ্য হয় না।

বা লাকার চিহ্নঞ্চ নাসাগ্রে যদি দৃশ্যতে।।

কিঞ্চিৎ শুক্লঞ্চ তচিহ্নগ্ধ সুখী নাত্ৰ সংশয়ঃ ।।

ললাটে যদি জায়তে শুক্লরেখা নরস্য চ।।

সুখিনং তং বিজানীয়াৎ কথিতং কামশাস্ত্রিণা।

এতক্ষণ ধরে মহাদেব পুরুষের সুখ, সৌভাগ্যের কতকগুলি রেখা বর্ণনা করলেন। এবারে তিনি এমন কতকগুলি চিহ্ন বর্ণনা করলেন, যা থাকলে মানুষ জীবনভাের দুঃখভােগ করে থাকে। যে পুরুষের চোখের উপর অর্থাৎ চোখের উপরের পাতার উপরিভাগে গৌরবর্ণ রেখা দেখা যায়, নিঃসংশয়ে সে পুরুষ আজীবন দুঃখভােগ করবে। যে পুরুষের নাসামূলে অর্থাৎ গােড়ার দিকে পীতবর্ণ অর্থাৎ হলদে রঙের চিহ্ন দেখা যায়, সে আজীবন দুঃখভােগ করে এতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।

গৌররূপা চ যা রেখা যদি স্যাৎ নেত্রসংস্থিতা।

দুঃখভােগী ভবেচ্চৈব নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।

নাসামুলে চ যৎ চিহ্নং দৃশ্যতে পীতবর্ণকম।

তঞ্চ দুঃখস্য মূলং স্যাৎ নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।

এ ছাড়া যদি কোন পুরুষের অধরে অর্থাৎ ঠোটে অরুণবর্ণ অর্থাৎ টকটকে লাল চিহ্ন থাকে, তবে তার সারা জীবন দুঃখের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে। যদি কোনও পুরুষের অঙ্কুষ্ঠের মুলদেশে কৃষ্ণবর্ণ রেখা দেখা যায় তাহলে সেই পুরুষ যতদিন জীবিত থাকে, দুঃখে শােকে তার কাল অতিবাহিত হয়ে থাকে। যদি কোনও পুরুষের করতলে মৎস্যপুচ্ছের চিহ্ন থাকে— সেই চিহ্ন সুখ ও ধর্মময় জীবনের লক্ষণ। কিন্তু সেই মৎস্যপুচ্ছের নিম্নভাগে বার্তুলাকার ধূম্রবর্ণ  চিহ্ন থাকলে সেটি খুব খারাপ। যতদিন সে বেঁচে থাকে খুব দুঃখে তার দিন অতিবাহিত হয়।

যদি স্যাদারুণং বর্ণং চিহ্নং কস্যাপি চাধরে।

তদা তস্য বিজানীয়াৎ জীবনং দুঃখমূলকম ।

অষ্ঠমূলমধ্যে যা বেখ। স্যাৎ কৃষ্ণবণিকা।।

দুঃখমূলং হি তস্য স্যাৎ জীবনং নাত্ৰ সংশয়ঃ ।।

মীনপুচ্ছসমীপে চ যস্য চিহ্নং ব্ৰজত থঃ।।

বক্ৰাকৃতিঃ ধূম্রবর্ণং দুঃখেন তস্য জীবনম।

যদি কোন পুরুষের তর্জনীর অগ্রভাগে অর্থাৎ তর্জনীর আগায় গােলাকার  চিহ্ন দেখা যায় তাহলে সে কখনাে সুখে কখনও বা সুখে দিনযাপন করে। তার জীবন মধ্যম ধরনের হয়।

মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে। ইলমে মারিফত জাগরনের পদ্ধতি।

মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে। ইলমে মারিফত জাগরনের পদ্ধতি।

মারেফত কি? 

মারেফত হলো উপলব্দি জ্ঞান যা হৃদয় দ্বারা উপলব্দি করতে হয়। প্রত্যেক জিনিস বা প্রত্যেক কর্মের দুটি দিক রয়েছে, একটি হলো বাহ্যিক বা স্থুল আর অপরটি হলো অভ্যন্তরিন বা সূক্ষ। স্থুল জ্ঞান দিয়ে বাহ্যিক অনেক কিছুই আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু স্থুল জ্ঞান দিয়ে সূক্ষ বিষয় উপলব্দি করা যায় না। সূক্ষ জ্ঞান দিয়ে সূক্ষ বিষয় উপব্দি করতে হয়। আর মারেফত উপলব্দি করতে হলে সূক্ষ জ্ঞান দরকার।

অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায়, প্রত্যেক জিনিসের বা কর্মের মূল লক্ষ্য বা তাৎপর্য রয়েছে। মারেফত হলো কোন বিষয়ের তাৎপর্য জ্ঞান যা সূক্ষ উপলব্দি ক্ষমতা দ্বারা বুঝতে হয়।

সুতরাং মারেফত হলো সূক্ষ জ্ঞান, উপলব্দি জ্ঞান। এটা বর্ননা দিয়ে বুঝানোর বিষয় নয়, হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করার বিষয়।

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ)

মারেফত নিয়ে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ) এর মন্তব্য-

মারিফত নিয়ে বিখ্যাত আধ্যাত্বিক মহাপুরুষ জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী শরীফ এ কিছু কথা লিখেছেন। নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরলাম।

চুঁ বছুরাত্‌ বেংগরী চশমাত দো আস্ত,
তু ব নূরাশ দর্‌ নেগার কানে এক্‌ তু আস্ত।
লা জেরা মচুঁ বর একে উফ্‌তাদ নজর,
আঁ একে বীনি দো না আইয়াদ দর্‌ বছর।
নূরে হর দো চশ্‌মে না তাওয়াঁ ফরকে করদ,
চুঁকে দর নূরাশ নজরে আন্দাখতে মর্‌দ।
উ চেরাগ আর হাজের্‌ আইয়াদ দর্‌ মকান,
হরি একে বাশদ্‌ বছুরাতে জেদ্দে আঁ।
ফরকে না তাওয়াঁ করদ নূরে হরি একে,
চুঁ ব নূরাশ রুয়ে আরী বে শকে।
উত্‌লুবুল মায়ানী মিনাল ফরকানে কুল।
লা নু ফাররেকু বাইনা আহাদেম্‌ মের রুছুল
গার তু ছাদ ছীবো ও ছদাই ব শুমারী,
ছাদ নুমাইয়াদ এক বুদ্‌ চুঁ ব ফেশারী
দর মায়ানী কেছমতে ও আদাদে নীস্ত,
দর মায়ানী তাজ্‌ জীয়া ও আফরাদে নীস্ত।

অর্থ: মাওলানা বলেন, ” আমি এই মারেফাত সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করিতাম, কিন্তু ভয় করি যে, কাহারও অন্তঃকরণ বিগ্‌ড়াইয়া না যায়। অত্যন্ত সূক্ষ্ম রহস্য। ফালাদ লোহার তরবারীর ন্যায় অত্যন্ত ধারাল। যদি তোমার নিকট ঢাল না থাকে, তবে পিছনে হটিয়া যাওয়াই উত্তম। এত সূক্ষ্মও তীক্ষ্ণ বিষয় ঢাল ব্যতীত আলোচনা করিতে অগ্রসর হওয়া উচিত না। কেননা, তরবারী কাটিতে কখনও লজ্জা বোধ করে না। এই রকমভাবে এই তীক্ষ্ম বিষয় যখন ভ্রান্ত ধারণার অন্তঃকরণে পতিত হইবে, তখন তাহার ঈমান নষ্ট হইয়া যাইবে। এইজন্য আমি আমার তরবারী কোষাবদ্ধ করিয়া রাখিলাম। তাহা হইলে কোনো তেড়া বুঝের লোক বিপদে পড়িবে না।”

মারেফত নিয়ে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর মন্তব্য-

মারেফত এর সাথে সৃষ্টির মুলের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই আধ্যাত্বিক ব্যাক্তিত্ব আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) তার সিররুল আসরার গ্রন্থে লিখেছেন, সৃষ্টির মুলে (হাকিকতে) পৌছতে হলে মারেফতের জ্ঞান অপরিহার্য। মারেফতের জ্ঞান ছাড়া লক্ষ্যস্থলে পৌছানো সম্ভব নয়।

বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)

অর্থাৎ মানব জনমের উদ্দ্যেশ্য হলো পুন্য কর্ম দ্বারা লক্ষ্যস্থলে হাকিকতে পৌছা। হাকিকতের চরম লক্ষ্যস্থলে পৌছতে হলে মারেফত বা আধ্যাত্বিকতার মধ্যদিয়ে পৌছাতে হয়। আধ্যাত্বিকতা বা মারেফত ছাড়া হাকিকতে পৌছার আর কোন রাস্থা পৃথিবীতে নেই। আর পৃথিবীতে যত মত পথ ধর্ম এবং এবাদত রয়েছে প্রত্যেকেরই লক্ষ্য উদ্দ্যেশ্য হলো হাকিকতে পৌছা। কারন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সকলেই হাকিকতের কেন্দ্রবিন্দু আলমে আরওয়াহ থেকে এসেছি। আর যেখান থেকে এসেছি সেখানে ফিরে যাওয়াই মানুষ্য জনমের একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত আধ্যাত্বিক মহাপুরুষ জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) তার বিখ্যাত মসনবী শরীফে লিখেছেন, ” মাওলানা বলেন, আমরা আলমে আরওয়াহ্‌র (রূহের জগতের) মধ্যে একই পদার্থ ছিলাম; সেখানে কোনো ভাগাভাগি ছিল না, আর কোনো সংখ্যাও ছিল না। সেখানে আমাদের দেহের কোনো অস্তিত্ব-ই ছিলনা। সূর্যের ন্যায় একই আলো জ্বলিতেছিল। পানির মত স্বচ্ছ পদার্থ ছিলাম। যখন খাটিঁ নূর ইহ-জগতে দেহরূপ ধারণ করিয়া আসিল, তখন বিভিন্নরূপ ধারণ করিয়া সংখ্যায় পরিণত হইল। প্রত্যেক দেহের সাথে রূহের সম্বন্ধ স্থাপিত হইল। যেমন পাথরের কণায় সূর্যের কিরণ পতিত হইলে প্রত্যেক কণায় পৃথক পৃথক আলো দেখায়, সেইরূপ আমাদের দেহে রূহের আলো আসিয়া পৃথকভাবে সংখ্যায় পরিণত করিয়াছে।।” অর্থাৎ আমরা আলমে আরওয়াহ বা স্রষ্টার অখন্ড সত্ত্বা থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে সৃষ্টি হয়ে এসেছি। তখন আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিলো স্রষ্টাকে সর্বক্ষন মনে রাখব। এক মুহুর্তের জন্য স্রষ্টাকে ভুলবনা। জগতে এসে যে কোন কাজই করিনা কেন এক মুহুর্তও স্রষ্টার স্বরন ছাড়া থাকবনা। কিন্তু বিষয়টা ঘটলো উল্টও। আমরা প্রতি মুহুর্তই স্রষ্টাকে ভুলিয়া রইলাম। এর পর স্রষ্টা আমাদের জন্য একের পর এক ধর্ম গ্রন্থ প্রেরন করতে থাকলেন এবং প্রত্যেক ধর্ম গ্রন্থে এবাদতের বিভিন্ন নিয়ম বেধে দিলেন যাতে করে কমপক্ষে এবাদতের সময়টাতে তাকে স্বরন করা যায়। কিন্তু হায়! দুঃখের বিষয় মানুষ সারাদিন তাকে স্বরন করবে তো দুরের কথা অল্প সময়ের জন্য শরীয়তি বা বাহ্যিক এবাদতের সময়ও মানুষের মন সৃষ্টিকর্তার স্বরন ধরে রাখতে পারেনা। মানুষের মন ছুটে বেড়ায় দুনিয়াবি নানা কাজ কর্মে। মানুষের এবাদত হয়ে যায় অন্তঃস্বারশুন্য একটা পদ্বতি মাত্র। অর্থাৎ মানুষ এবাদতের নামে শুধুমাত্র অন্তঃস্বারশুন্য কিছু পদ্বতি পালন করে চলছে।

মারেফতের বা আধ্যাত্বিকতার সংজ্ঞা

আধ্যাত্বিকতাকে অল্প কথায় সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। কারন আধ্যাত্বিকতার মুলের সাথে রয়েছে সৃষ্টির মুলের গভীর সম্পর্ক। যেখানে আধ্যাত্বিকতার প্রকাশ রয়েছে বুঝতে হবে এটা সৃষ্টির মুলেরই প্রকাশ। অর্থাৎ আধ্যাত্বিকতা যেখান থেকে উৎপত্তি এই ভ্রম্মান্ড সেখান থেকই উৎপত্তি। আর কেউ যদি এই আধ্যাত্বিকতার চরম সীমায় পৌছতে পারে তবে সে সৃষ্টির আদি অন্ত সব জানতে পারে এবং সমগ্র সৃষ্টি নিয়ন্ত্রন সে করতে পারে।

মারেফত বা আধ্যাত্বিকতার সীমানা বা শেষ কোথায়?

 

আর যখন কেউ আধ্যাত্বিকতার শেষ সীমানায় পৌছে যায় তখন তার দুনিয়ার প্রতি আর আকর্ষন থাকেনা। তার মাঝে দুনিয়ার আর কোন কামনা বাসনা থাকেনা। তার মন শিশুর মত নির্মল ও পবিত্র হয়ে যায়। তখন সে দেখতে পায় দুনিয়ার সমস্ত সৃষ্টি তার অধিনে রয়েছে। তখন তার মনে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা থাকেনা সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার। এই জন্য বলা হয় যাদের মাঝে বিন্দুমাত্র দুনিয়ার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তারা আধ্যাত্বিকতার শেষ সিমানায় পৌছতে পারেনা।

আধ্যাত্বিকতার সীমানা যে কত প্রসারিত তা আমাদের ধারনারও বাহিরে। কারন আধ্যাত্বিকতার সীমানার কাছে আমাদের জ্ঞান খুবই নগন্য। আমাদের এই ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে আধ্যাত্বিকতার পরিধি বিশ্লেষন করা আসাধ্য বিষয়। যারা আধ্যাত্বিকতায় পরিপুর্নতা লাভ করেছে কেবল তারাই এর মর্ম বুঝতে পারবে। আধ্যাত্বিকতা ভাষায় বর্ননা দিয়ে বুঝানো যায়না। এটা বুঝতে হলে প্রখর অনুভুতি শক্তি থাকা চাই। কারন অনুভুতির মাধ্যমে এটা উপলব্দি করতে হয়। বিখ্যাত আধ্যাত্বিক মহাপুরুষ জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন,যদি সুর্য পৃথিবীর কাছে চলে আসে তবে পৃথিবী জ্বলে পুরে ছার কার হয়ে যাবে। অনুরুপভাবে কারো হৃদয়ে যদি হঠাত আধ্যাত্বিকতা প্রকাশ পায় তবে তার হৃদয় জ্বলে পুরে যাবে।

উপরেরর কথাগুলি গভীর উচ্চমার্গের কথা। সচরাচর আমরা আধ্যাত্বিকতা নিয়ে এত গভীরে ভাবিনা। কারন জগতের বড় বড় আধ্যাত্বিক লোক সম্পর্কে আমরা খুজ খবর রাখিনা এবং তাদের জীবনে আধ্যাত্বিকতা অর্জন করতে গিয়ে কত ধাপ অতিক্রম করেছেন তা আমরা জানতে চাই না। নিজের মধ্যে আধ্যাত্বিকতার অল্প ছুয়াতে আমরা মনে করি আমরা আধ্যাত্বিক হয়ে গেছি।

এমন কি কোন লোকের মধ্যে যদি অলৌকিকতা বা বিরাট কারামতি ও প্রকাশ পায় তবুও বুঝতে হবে এগুলো আধ্যাতিকতার শেষ সীমানার তুলনায় খুবই নগন্য। তবে অলৌকিকতা প্রকাশ হওয়া এটাও কোন সাধারন বিষয় নয়। অলৌকিকতা বা কারামত প্রকাশ কেবল উচ্চপর্যায়ের আধ্যাত্বিক মহাপুরুষদের বেলায় হয়ে থাকে।

মারেফত বা আধ্যাত্বিকতা এবং পুর্ন বা চরম আধ্যাত্বিকতা

 

আমিও একসময় এই ভুলের মধ্যে ছিলাম। আমি ২০০৭ সালের ২৭ শে মার্চ থেকে ধ্যান সাধনা শুরু করেছিলাম। প্রথম বছর ধ্যান করার পর আমার মধ্যে প্রচুর শারীরীক ও মানষিক পরিবর্তন লক্ষ্য করি। হৃদয়ে ও অনুভুতির বিরাট পরিবর্তন হওয়ার ফলে আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম আমি বিরাট আধ্যাত্বিক লোক হয়ে গেছি। আমি বর্তমানে ২০২১ সালে এসেও আমার ধ্যান সাধনা চালিয়ে যাচ্ছি।  কিন্তু ধ্যান সাধনা করতে করতে বর্তমানে ২০২১ সালে এসে যতই ধ্যানের গভীরে পৌছতে থাকি ততই বুঝতে পারি যে আধ্যাত্বিকতার শেষ সীমানায় পৌছা একটা দুর্লভ বিষয়।

বর্তমানে আমি কোন পর্যায়ে এসে এসব কথা বলতেছি আমার শরীরের লক্ষন সম্পর্কে কিছুটা বর্ননা দিলে যারা আধ্যাত্বিকতা সম্পর্কে বুঝে তারা কিছুটা বুঝতে পারবে। আপনারা হয়ত বিখ্যাত আধ্যাত্বিক মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ ও ফকির লালন সাঁই এর কথা শুনেছেন। তাদের লেখনিতে আধ্যাত্বিকতা নিয়ে গভীর তত্ব পাওয়া যায়। স্বামী বিবেকানন্দের লিখা রাজযোগ গ্রন্থতে তিনি লিখেছেন ধ্যান সাধনার কোন এক পর্যায়ে এসে মানব শরীরে কুরুকুন্ডলী জাগ্রত হয়। আমি ধ্যান সাধনা শুরু করার এক বছর পরে আমার দেহে কুরুকুন্ডলি জাগ্রত হয়ে গিয়েছিল। তখন কুরুকুন্ডলী শব্দের সঙ্গে আমার কোন পরিচয় ছিলনা। কুরুকুন্ডলী জাগার অনেক দিন পরে যখন আমি রাযযোগ বইটা পড়েছি তখন বুঝতে পেরেছি এটার নাম কুরুকুণ্ডলী। আর ধ্যান সাধনা শুরু করার অনেক দিন পর যখন মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ) এর মসনবী শরীফ পড়লাম তখন দেখলাম, মোরাকাবা মোশাহেদার (ধ্যান) কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন,” মোরাকাবার প্রথম অবস্থায় অসুস্থতা অনুভব করলেও এতে ভয় পাওয়ার কারন নাই।

ধ্যান সাধনা ও কুরুকুন্ডলী জাগরন

 

কুরুকুণ্ডলী জাগার পরে মেরুদন্ডের নিচ থেকে উপরের দিকে যে এক প্রশান্তির ধারা বইতে থাকে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। যত একা থাকবেন প্রশান্তির ধারা তত আধিক পরিমানে বাড়তে থাকবে। তাই আমি ২০০৬ সালের ২৭ শে মার্চের পর থেকে ২০২১ অবধি পর্যন্ত আমি একা থাকতে খুবই পছন্দ করি এবং বেশির ভাগ সময়ে একাই থাকি।

কুরুকুন্ডলী হলো এমন একটি শক্তি যা মেরুদণ্ডের গুরা থেকে উৎপন্ন হয়। বড় বড় আধ্যাত্বিক মহাপুরুষদের ভাষায় পৃথিবীতে গোটা কয়েক সৌভাগ্যবান মানুষের মধ্যে কুরুকুণ্ডলী জাগ্রত হয়।  কুরুকুণ্ডলী জাগ্রত হওয়ার পর শরীরে ভিতরে আরও কত লক্ষন যে প্রকাশ পায় তা বলার বাহিরে। যাইহোক বড় বড় আধ্যাত্বিক লোকদের শাস্ত্র পড়ে জানা যায় যে কুরুকুণ্ডলী দেহের মধ্যে জাগরিত হওয়া সাধারন বিষয় নয়। খুব অল্প লোকের মধ্যেই এগুলা প্রকাশ পায়। আর এই দীর্ঘ সময় ধ্যান সাধনা করার পর যখন আমি উপলব্দি করার চেষ্টা করলাম আধ্যাত্বিকতার শেষ কোথায় তখন আমি বোবা হয়ে গেলাম। এতদিন পর আমি বুঝতে পাড়লাম আধ্যাত্বিকতার যাত্রা শুরু করলাম মাত্র।

সুতরাং পুর্ন আধ্যাত্বিকতা অর্জন করা যে কত বড় কঠিন কাজ আমরা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি। আধ্যাত্বিকতা অর্জন করতে হলে দীর্ঘ সময় কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।

ডাঃ শাহীনুর আহমেদ চৌধুরী (আধ্যাত্বিক সাধক)
মাসিক।প্রথম ঋতুস্রাব কোন তিতিতে হলে কি হয়?

মাসিক।প্রথম ঋতুস্রাব কোন তিতিতে হলে কি হয়?

প্রথম ঋতুস্রাব বৃহৎ রতিশাস্ত্র থেকে আলোচনা।

গিরিরাজনন্দিনী পার্বতী ধৈর্যসহকারে মহাদেবের কাছ থেকে সমস্ত শাস্ত্রবচন শুনলেন।

তার মন আনন্দে ভরে উঠল।

মহাদেবের মত জ্ঞানী যে সারা বিশ্বে দুর্লভ তা তিনি তার মুখ থেকে সমস্ত শাস্ত্রবচন শুনে স্পষ্টই বুঝতে পারলেন।

তিনি তখন অত্যন্ত বিনয় বচনে ধীরে ধীরে মহাদেবকে বললেন-হে দেব! আপনার মুখে সমস্ত শাস্ত্রবচন শুনলাম। আপনার পায়ে আমার ভক্তিপূর্ণ নমস্কার।

এখন আপনার নিকট আমি যা জানতে চাই, আশা করি তা আমার কাছে বর্ণনা করে আমার মনের কৌতূহল নিবৃত্ত করতে নিশ্চয়ই সচেষ্ট হবেন।

নারীজাতির ঋতুলক্ষণের বিষয় শোনবার জন্যে আমার একান্ত কৌতুহল হয়েছে। অর্থাৎ নারীজাতি যখন প্রথম রজঃস্বলা (প্রথম ঋতুস্রাব) হয় তার তিথি, মাস, নক্ষত্র, বার প্রভৃতি দোষ-গুণে কিরূপ ফল পায় তা কৃপা করে আমাকে বলুন।

ঋতুস্রাব

এতং ত্বয়েরিতং সব্বং নমস্তেহস্তু নমােনমঃ।।

আধুনা ক্ৰহি মে দেব নারীণাং ঋতুলক্ষণং ।

দেবীর কথায় মহাদেব সন্তুষ্ট হলেন।

তিনি বললেন –হে দেবি ! এবারে আমি নারীদের ঋতুলক্ষণগুলি একে একে বর্ণনা করছি, তুমি তা শ্রবণ কর এগুলি শুনলে রতিশাস্ত্রে বিশেষ জ্ঞানলাভ হয়ে থাকে ।

সবার আগে তিথিফল অর্থাৎ কোন্ তিথিতে আদ্যঋতু হলে কিরূপ ফল হয় সে বিষয়ে বলতে উদ্যত হয়েছি। তুমি নিবিষ্ট মনে আমার বাক্য শ্রবণ কর।

শূণু দেবি প্রবক্ষ্যামি নারীণাং ঋতুলক্ষণং।।

যচ্ছা জায়তে জ্ঞানং রতিশাস্ত্রে মহেশ্বরি।

তাদৌ তু প্রবক্ষামি তিথিনাং ফলমুত্তমং ।

শৃণুকৈমনা ভূত্বা রতিশাস্ত্রোদিতং যথা।।

আদখা হয় তিথিল মহাদেব বললেন-হে দেবি !

এখন প্রথম ঋতুস্রাব (আদ্যঋতুর) তিথিফল শােন।

প্রথমা অর্থাৎ প্রতিপদ তিথিতে যে নারীর ঋতুপদ্ম বিকশিত হয়, যে নারী শমনভবনে যায় অর্থাৎ অল্পদিনে তার মৃত্যু হয়, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।

হে প্রিয়ে! যদি দ্বিতীয়া তিথিতে কোন নারী প্রথম ঋতুস্রাব হয়, তাহলে সেই নারীর স্মৃতিশক্তির তীক্ষ্ণতা কমে যায়, এই নির্দেশ দিয়ে থাকেন শাস্ত্রবিদ পণ্ডিতেরা।

হে মহেশ্বরি! তৃতীয়া তিথিতে যদি নারীজাতির কমল বিকাশপ্রাপ্ত হয় তাহলে তার ঋতু বিফল হয়ে যায়। তাতে কোন সন্তান জন্ম হয় না।।

হে প্রিয়ে! তার পরবতী ঋতুদর্শনের বর্ণনা শােন। চতুর্থী তিথিতে কোন নারী যদি প্রথম ঋতুদর্শন করে, তা হলে সে বন্ধ্যা হয়ে থাকে।

যদি পঞ্চমী তিথিতে কোন নারী ঋতুদর্শন করে, তা হলে সে অল্পদিনের মধ্যে মারা যায়। এ কথা শাস্ত্রের বচন।

ষষ্ঠী তিথিতে যদি কোন নারী আদ্যঋতু দর্শন করে তবে তার অবস্থা প্রথমার মত হয়, অর্থাৎ সেও অল্পদিনের মধ্যে মারা যায়। এ কথা নিশ্চিত সত্য।।

সপ্তমী তিথিতে কোন নারী আদ্যঋতু দর্শন করলে সে হয় কাকবন্ধ্যা, আর অষ্টমী তিথিতে আদ্যঋতু যদি নারীর হয়, সে হয় নাগিনীস্বরূপা অর্থাৎ মন হয় হিংসুটে ও বিদ্বেষভাবাপন্ন।

হে দেবি, যে নারী নবম তিথিতে প্রথম ঋতুদর্শন করে, তাকে নারী জাতির মধ্যে উৎকৃষ্টা বলে জানা যায়। সে নারী সুসন্তানের জননী হয়।

কিন্তু দশমী তিথিতে আদ্যঋতু দর্শন করলে সেই নারী হয় রাক্ষসী স্বরূপ অর্থাৎ রাক্ষসীর মত ভয়াবহ। এটি যে নিভূল কথা, তা শাস্ত্রকারগণ স্বীকার করেছেন।

একাদশী তিথিতে কোনও নারী যদি প্রথম ঋতুস্রাব দর্শন করে তবে তাকে ডাকিনী বলে জ্ঞান করবে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

দ্বাদশী তিথিতে যে কন্যা ঋতুমতী হয় তাকে যোগিনী বলে জ্ঞান করতে হবে।

ত্রয়ােদশী তিথিতে যে নারী আদ্যঋতু দর্শন করে, সে খুবই পতিব্রতা ও পতিভক্তিপরায়ণা। সে আদর্শ গৃহিণী হয়, এটি শাস্ত্রের কথা।

চতুর্দশী তিথিতে যদি কোনও নারী আঋতু দর্শন করে তবে সে লক্ষ্মীভ্রষ্টা হয় অর্থাৎ তার ধন-দৌলত নষ্ট হয়।।

পূর্ণিমা তিথিতে যদি কোনও নারী ঋতুমতী হয়, তাকে দেবীরূপিণী অর্থাৎ সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী বলে জ্ঞান করবে।

আর যদি অমাবস্যা তিথিতে কোনও নারী ঋতুমতী হয় তবে সে জরা রোগ ইত্যাদিতে ভুগে থাকে।

এগুলি শাস্ত্রোক্ত ভাষায়

বিসতি যদা পদ্মং প্রথমায়াং মহেশ্বরি।

অচিরাৎ মিয়তে সৈব নাত্ৰ কাৰ্যা বিচারণা ।

দ্বিতীয়ায়াং ভবেন্নারী যদি রজস্বলা প্রিয়ে।।

স্মৃতেলে পা ভবেশ্চৈব ইতি শাস্ত্রবিদাং মতং ।

বিসতি যদা পদ্মং তৃতীয়ায়াং মহেশ্বরি।

ঋতুব্যথা ভবেন্নারী শৃণু-তৎপরতাে যথা।

পঞ্চমাং মিয়তে নারী চতুর্থী বন্ধকী তথা।

ষষ্ঠ্যাং বিসতি পদ্মং পঞ্চমী ফলমায়া ৷৷

সপ্তম্যাং কাকবন্ধ্যা ত অষ্টম্যাং নাগিনী ভবেৎ।

মানবজাতিয়াং বিদ্যাং নবম্যাং দেবী সত্তমে।

বিসতি যদা পদ্মং দশম্যাং পক্ষয়ােদ্দয়েন।

রাক্ষসী সা ভবেন্নারী গীয়তে তু মনীষিভিঃ।

একাদশাস্তিথৌ নারী যদি রজোবতী ভবেৎ।

ডাকিনী তাং বিজানীয়াৎ নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।

দ্বাদশ্যাং যােগিনী চৈব যদি কন্যা রজস্বলা।

পতিব্রতা ভবেশ্চৈব ত্রয়ােদশাং মহেশ্বরি ।

লক্ষ্মীহীনা চতুর্দশাং কীৰ্ত্তিতং বিবুধৈরিতি ।

পূর্ণিমায়াং ভবেন্নারী দেবী সা লক্ষ্মীরূপিণী ।

অমবস্যাস্তিথৌ নারী যদি রজস্বলা ভবেৎ।

জরাব্যাধি সমাকীর্ণা নাত্ৰ কাৰ্য্যা বিচারণা।

সূত্রঃ বৃহৎ রতিশাস্ত্র