Select Page
হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর জীবনী-বানী ! গরীবে নেওয়াজ এর কারামত

হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর জীবনী-বানী ! গরীবে নেওয়াজ এর কারামত

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী পরিচিতি ও ইতিহাস পাঠে জানা যায়, যে সকল মহান ব্যক্তির অক্লান্ত কর্ম প্রচেষ্টার ফলে বঙ্গ-ভারতে সােনালী ইসলামের নির্মল আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ সম্ভব হয়েছে, তাদের মধ্যে রূহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা সূফী কুলের শিরােমণি মর্দে মুজাহিদ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়।

একথা বাস্তাব সত্য যে তিনিই সাধক কুলের সম্রাট সুফীবৃন্দের গৌরব, তাপসগণের শিরমণি ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রনায়ক হযরত মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহতার বিচিত্র জীবন কাহিনী ধ্যানােপাসনার জন্য প্রেরণাদানকারী হিসাবে আমাদের নিকট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিহাসের পাতা খুললে আমরা দেখতে পাই ইসলামের জন্য তার আত্মত্যাগ তাকে ইতিহাসের সােনালী পাতায় অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। সত্যি কথা বলতে কি তার জীবন কাহিনী বহু কর্তি ও সাধনা সমৃদ্ধ ছিল। আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ সােনালী ইসলামের নির্মল আদর্শ প্রচারে বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখিন হয়ে শেষ পর্যন্ত সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরােহণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

ঐতিহাসিকগণ বলেন, বঙ্গ-ভারতের ইসলাম প্রচারেখাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) যে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন, তাহা ইতিহাসের পাতায় চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। তাকে কেন্দ্র করে অনেক উপাখ্যান রচিত হয়েছে। পরিশেষে আমরা এইরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে সত্যের সৈনিক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এমন একজন আদর্শ স্থানীয় মানুষ ছিলেন যে পার্থিব ভােগ বিলাসিতা দূরের কথা কৃচ্ছ সাধনায়ই কেটে ছিল তা সারাজীবন। ইতিহাসবেত্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায়, আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ-এর হাতে অসংখ্য মুসলমান ও অমুসলমান বাইয়াত গ্রহণ করে নিজেদের জীবন ধন্য করেছেন। ( মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে )

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

জন্ম ও বংশ পরিচয় :-

 

রূহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী সাহেবের জন্ম হয় সিস্তানের গনজর পল্লীতে। ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায়, তার পিতা খাজা গিয়াসুদ্দীন ছিলেন একাধারে খােদাভক্ত আবেদ এবং বিত্তশালী ব্যক্তি। তিনি সর্বদা কুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে চেষ্টা করতেন। সুতরাং খাজা সাহেব বাল্যকালে অত্যন্ত যত্ন ও স্নেহের সাথে প্রতিপালিত হয়ে ছিলেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সানজারী রহমাতুল্লাহ পবিত্র আরবের সুবিখ্যাত কুরাইশ বংশদ্ভূত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর নিম্নতর বংশধর ছিলেন। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তিনি মাতৃ বংশসূত্র ও পিতৃ বংশসূত্র উভয় দিক দিয়াই সত্যের সৈনিক শেরে খােদার সহিত ওঁতপােতভাবে জড়িত ছিলেন। সত্যের সেনানী হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমাতুল্লাহ এর জন্ম সাল ও তারিখ সম্বন্ধেও সুসাহিত্যিক লেখকদের মধ্যে বেশ মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )

১। সিয়ারুল আকতারের লেখকের মতে সত্যের অগ্রনায়ক হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহ এর জন্মসাল হল ৫৩৭ হিজরী। তিনি বহু চিন্তা ভাবনা যুক্তি তর্ক ও বিস্তারিত আলােচনার পর তার জন্ম দিন হিসাবে ৫৩৭ হিজরী সালের ১৪ই রজব সােমবারকে মনােনয়ন করেছেন এবং তিনি, এ কথা বলেছেন যে সুফীকুলের শিরমণি ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রনায়ক খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ উক্ত তারিখেই ধরাধামে আগমন করেছেন।

২। অন্যদিকে খাজা সাহেবের রহমাতুল্লাহ সাল ও তারিখ সম্বন্ধে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সজিনাতুন আসফিয়ার-এর লেখক উল্লেখ করেছেন যে, আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) হিজরী ৫৩০ সনের ১৪ই রজব সােমবার বােহে সাদিকের সময় এ ধরাধামে আগমন করেছেন। উক্ত আলােচনা হতে অনুধাবন করা যেতে পারে যে, উভয় লেখকই দুইটি বিষয়ে একমত এবং একটি বিষয়ে ভিন্নমত পােষণ করতেছেন। যে বিষয়দ্বয়ে তারা একমত প্রকাশ করেছেন তাহা হল ১৪ই রজব এবং সােমবার। কিন্তু সনের ক্ষেত্রে উভয় এমন মত পােষণ করেছেন যে এখন দুই মতের মধ্যে সাত বছরের ব্যবধান রয়েছে। তবে খাজা গরীব নেওয়াজ রহমাতুল্লাহ যে কোন সালেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী ব্যান্ডকে সমুন্নত করবার জন্য তিন যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

ইতিহাস পাঠে জানা যায়, সৈয়দা উমমুল ওয়ারা গর্ভাবস্থায় অনেক নেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এমনও দেখা গেছে বহু সময় তিনি নিজের স্বপ্নের কথা সলজ্জভাবে স্বামী হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন রহমাতুল্লাহ এর নিকট ব্যক্ত করতেন। পূন্যবান ও বিচক্ষণ স্বামী তাকে নানাভাবে প্রবােধ দান করতেন এবং মনে মনে ভাৰী সুসন্তানের চন্দ্র মুখ দেখবার প্রত্যাশায় উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন। | সত্যি কথা বলতে হয়, একদিন তাদের বাসগৃহে উজ্জ্বল করে রূহানী জগতের খাটি প্রদাতা সত্যের দিশারী খাজা গরীব নেওয়াজ রহমাতুল্লাহ ধরাধামে পদার্পন করেন। তার আগমনে সারা পরিবারে আনন্দের ফোয়ারা ছুটলো। ইতিহাস বেত্তারা বলেন, তার আগমনের তিন কিংবা সাত দিন পর, নবজাত শিশুর নাম রাখা হয় মঈনুদ্দীন কিন্তু বিবি উম্মু ওয়ার ও খাজা গিয়াসুদ্দীন রহমাতুল্লাহ তাকে হাসান নামেই ডাকতেন। যার কারণে ইতিহাস বেত্তারা এ জীবনীকার হাসান-শব্দটিকে তার আসল নামের সহিত সংযুক্ত করে তার নামকে মঈনুদ্দীন হাসান বলে উল্লেখ করেন।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

বাল্য জীবনঃ

ইসলামের দিশারী সুফীসুধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর বয়স যখন সাত বৎসরে উপনিত হয়েছে, তখন হতেই তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। শুধু নামাজ আদায় করে ক্ষ্যান্ত হতেন না। এই বাচ্চা বয়সে তিনি নিয়মিত রােজা রাখতেন ও জিকিরের মজলিসে যােগ দিতেন। যদি কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা তার কানে আসত, শুনিমাত্রই তিনি বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মজলিসে অংশগ্রহণ করতেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করলেই অনুধাবন করতে পারবেন যে, খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ বাল্যকালে কতদূর খােদাভীতি অর্জন করেছিলেন, যাহা নিম্নের ঘটনার দ্বারাই প্রতিফলিত হবে।

একদা তিনি স্বীয় পিতার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন, এহেন সময় পথিমধ্যে এক অন্ধ ও অসহায় বালককে ময়লা ও ছেড়া কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়তে দেখলেন। সত্যি, খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ, উহা দেখিবামাত্রই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ইহাতে তার হৃদয়ের মনিকোঠায় এক অজানা ব্যথার উদয় হল। তিনি এ বালকের অবস্থা দেখতে দাঁড়ায়ে বহুক্ষণ চিন্তা করলেন। ইতিহাস বেত্তারা বলেন, তাপৰ পিতার অনুমতি ও নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিজের পরিধেয় নতুন বস্ত্র খুলিয়া অন্ধ বালকটিকে পরিধান করালেন এবং হরষিত চিত্তে মহান করুণার আধার আল্লাহ জাল্লা শানুর শুকুরিয়া আদায় করলেন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ঈদের নামাজ আদায় করে মনের হয়ে নিজ গৃহে প্রতীত্যন করলেন। হানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনউদ্দি চিশতী রহমাতুল্লাহ এর সমুদয় কার্য কলাপই হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন (রাঃ) অদূরে থেকে নিরীক্ষণ করলেন, এবং মনে মনে বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের শুকর গুজারী করলেন।

উপসংহারে একথা বলা যেতে পারে যে, সূফী সাধক আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহ ইসলামের ইতিহাসের তথা ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্কর হয়ে থাকবেন, তা তার বাল্যকালের প্রতিভা, চালচলন থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহ ছিলেন দুনিয়ার গছে আজম, কুতুবুল আক্তার এবং সমগ্র জিল ও ইনসানগণের পথ প্রদর্শক। তিনি যে বেলায়েতী গগনের দীপ্তিমান সূর্যস্বরূপ হবেন তা তার বাল্যকালেয় প্রতিচ্ছৰি থেকেই অনুধবন করা যেত। ইসলামের ইতহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তিনি মাতৃ গর্ভ হতে তিনি অলীরূপে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )

একথা বাস্তব সত্য যে শিশুকাল হতেই তিনি অকল্পনীয় কারামত এবং ঐশী, ক্ষমাসমূহের অধিকারী ছিলেন। একথাও শুনা যায় কেবলমাত্র যখন সাত বৎসর বয়সে উপনিত হয়েছিলেন এ সময় তিনি অর্থসহ ঐশীগ্রন্থ আল কোরান হেফজ করেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ইলমে হাদীস ও ইলমে ফেকাতত পান্ডিত্ব অর্জন করেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ শুনলে অবাৰ হবেন সত্যের অগ্রনায়ক খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহ মাত্র পনের বছর বয়সে এলমে তাছাউফ তত্ব সম্পর্কিত একখানা মূল্যবান গ্রন্থ তক্ত প্রণীত হয়েছিল। বাল্যকালের এসব নিদর্শন থেকেই প্রমাণ করেছিল যে তিনি ইসলামের একজন অলী হবেন।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

ত্রিজীবন ও অধ্যবসায়ঃ

যে ব্যক্তি এলমে দ্বীন হাসিলের উদ্দেশ্যে বের হয়, ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর পথেই থাকে।” (আল হাদীস) | খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ সেই সময়ে দ্বীন অর্জনের নিমিত্ত ঘরবাড়ী পরিত্যাগ করলেন। প্রথমে তিনি সমৱকাৰ গমন করলেন। সে সময় সমরকন্দ ও বােখরা ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত ছিল। বড় বড় মােহাদ্দেছ, ফকীহ, দার্শনিক ও চিন্তাশীল পণ্ডিতগণ সেখানে বাস করতেন। খাজা সাহেব প্রথমে কোরআন শরীফ হেফজ করলেন। অতঃপর তাফসীর, হাদীছ, ফেকা, ওসূল মানতেক ইত্যাদি বিষয় অধ্যায়ন করলেন। তখনকার দিনে সাধারণত মানুষের স্মৃতিশক্তি প্রখর ছিল। খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ এর স্মৃতিশক্তি ছিল তার চাইতেও প্রখর। কোরআন শরীফ হেফম করতে তার মাত্র গুটিকয়েক দিন সময় ব্যয়িত হয়েছিল। তাফসীর হাদীছ ইত্যাদি শিক্ষা করতেও তার খুব বেশি দিন লাগে নাই। বিশেষতঃ দুনিয়ার পিছনে তার কোন আকর্ষণ ছিল না বলিয়া একনিষ্ঠ ভাবে তিনি সাধনা করতে পেরেছিলেন এবং এর ফলেই শিক্ষাক্ষেত্রে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি প্রচুর দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হন। যাহেরী বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেও তার তৃষ্ণাতুর মনের আন-পিপাসা নিবৃত হইল না। তিনি বােখরা পরিত্যাগ করে আবার নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা করলেন।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

খাজা ওসমান হারুনী রহমাতুল্লাহ নিকট বাইয়াত গ্রহণঃ

ইসলামের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়; তৎকালে নিশাপুরের অধিবাসী খাজা ওসমানহারুনী ছিলেন সুফী জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। আলেম কুলের শিরমণি যুগ সেরা তাপস। ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রনায়ক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ, আধ্যাত্মিক জগতের শেষ প্রান্তে পেীছার মানষে দেশ বিদেশে যােগ্য মাশায়েখ খুছতেছিলেন। যাই হােক অনেক খোজাখুজির পর শেষ পর্যন্ত যােগ্য মাশায়েক খাজা ওসমান হারুনী হমাহ কে পেয়ে অবশেষে তার নিকট মুরীদ হয়ে আধ্যাত্মিক জগতের পথকে সুগম করলেন এবং নিজেকে ধন্য করলেন।

ইতিহাস বেত্তারা বলেন, রুহানী জগতের আঁটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ আড়াই বছরকাল পীরের খেতমতে ছিলেন। কঠোর ইবাদত, রিয়াযাত ও মোরাকাবা মােশাহিদৱ মাধ্যমে তিনি বাতেনী কামালিয়াত অর্জন করে সফর শুরু করলেন। ইতিহাস বেক্তারা বলেন, প্রথমে তিনি মক্কা শরীফে উপস্থিত হয়ে হজ্জ পালন করলেন। এর পর মদিনা শরীফে নিখিল বিশ্বের ত্রাণকর্তা সুপারিশের কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর পবিত্র রওজা মােৰাৱক যিয়ারত করবার সময় শুনতে পাইলেন, নৰীয়ে দোজাহান হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাকে বলতেছেন, তোমাকে আমি হিন্দুস্থানের বেলায়েত অর্জন করতেছি। তুমি যেখানে যেয়ে সােনালী ইসলামের নির্মল আদর্শের কথা মানুষের মাঝে প্রচার কর। সত্য কথা বলতে কি, সত্যের সৈনিক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রাঃ) যখন এই দেশে আগমন করলেন, তখন হিন্দুস্থানের প্রায় সর্বত্রই মুর্তি পূজার প্রচলন ছিল। সত্যি কথা বলতে হয় সিন্ধু বিজয়ের ফলে এই দেশে মুসলিম সভ্যতা যতটুকু প্রসার লাভ করেছিল, কালের প্রভাবে তাও বিলিন হয়ে গিয়েছিল। | খােদাদ্রোহীদের প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে এই দেশবাসী দেব দেবীর পূজায় নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের শােচনীয় পরিনামের কথা স্মরণ করে রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ ভ্রান্ত মানবদিগকে সত্যিকার খোদার দিকে ফিরায়ে আনার জন্য আত্ম নিয়ােগ করলেন। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

দিল্লীর প্রতিকূল অবস্থাঃ

ইতিহাস বেত্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায়, যে, দিল্লীর রাজা ছিলেন তখন পৃথ্বিরাজ। তারাইনের প্রথম যুদ্ধে তিনি বিপ্লবী বীর মুহাম্মদ ঘুরীর মত বাহাদুরকেও পরাজিত করেছিলেন। মুহাম্মদ ঘুরীর এই আক্রমণ সমস্ত হিন্দু দিগকে মুসলিম বিদ্বেষী করে তুলছিল। হিন্দুগণ মুসলমানদিগকে নীচ আত ও মে বলে ধারণা করত এবং তাদের কথা শুনলে চটে যেত। এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা আলেম কুলের শিরমণি মর্দে মুজাহিদ খাজা সাহেব আল্লাহর শপথ নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে সর্বস্তরের মানুষকে গােনালী ইসলামের দিকে আহবান দিতে লাগলেন। দেশ বিদেশ হতে মানুষ তার দরবারে আসত।

মহান আল্লাহ জাল্লা শানুর অসীম কৃপায় খাজা সাহেবের সুমিষ্ট ভাষণ ও আন্তরিক রুহানিয়াতের প্রভাবে ক্রমে ক্রমে লােকেরা সত্যের দিকে ঝুকে পড়ল। তার অলৌকিক ক্ষমতা দর্শনে ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য শ্ৰবনে বহু গোঁড়া হিন্দু তাকে শ্রদ্ধার সৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন। প্রিয় পাঠক, পাঠিকাগণ উক্ত আলােচনা থেকেই অনুধাবন করতে পারেন যে সত্যের সৈনিক হযরত খাজা সাহেব কত উচ্চ পর্যায়ের লোক ছিলেন। একথা দিবালোকের ন্যায় সমুজল যে হযরত খাজা মঈনুদ্দীন সাধক কুলের শিরমণি ছিলেন। ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কিকট তিনি একজন সর্বজন মান্য ও এজাজান তাপস ব্যক্তি ছিলেন। সত্যি কথা বলতে হয় ইসলাম প্রচারে তার অবদান ছিল অবিস্বরনীয়।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী 

আজমীর গমনঃ

খাজা বাবার জীবনী ও অলৌকিক ঘটনাঃ

খাজা সাহেব তার প্রাণপ্রিয় মুরীদ খাজা কুতুবুদ্দীনকে দিল্লীতে রেখে আজমীরের দিকে রওয়ানা হলেন। খাজা সাহেব আজমীরে গমন করে যেখানে নিজ বাসভূমি স্থাপন করলেন তা ছিল হিন্দু রাজার চারণভূমি। আলেমকুলের শিৱমণি খাজা মঈনুমীন চিশতী রহমাতুল্লাহ-কে দেখে রাখালগণ বিরক্ত হলেন, শুধু বিরক্ত নয় শেষ পর্যন্ত সেইখান হতে তাকে চলে যাওয়ার জন্য বলল। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ এই ভেবে দেখুন খাজা সাহেব কতদূর আল্লাহর মায়ার বান্দা ছিলেন।

সন্ধ্যার সময় রাখালগাল উটগুলাে সহাস্থানে রেখে চলে গেলেন। পরের দিন খুব ভােরে রাখালগণ এসে দেখলাে উটের চামড়া মাটির সাথে যুক্ত হয়ে আছে। এহেন অবস্থা দেখে রাখালগণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন, অগত্যা রাখালগণ সাধক কুলের শিরমণি খাজা সাহেবের পদপ্রান্তে পড়ে মাফ চাইল। মাফ চাওয়া মাত্রই দেখলাে উটগুলাে যথাস্থানে দাঁড়াইয়া রয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যে এই অলৌক্কি ঘটনা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। এই ঘটনার পর থেকেই তার কাছে বহু হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করলেন।

আনা সাগরের তীরবর্তী মন্দির এর কথা সর্বজন বিদিত যে, রাজকীয় রাখালদের উৎপীড়নে সাধক কুলের শিরমণি হযরত খাজা সাহেব ঐতিহাসিক আনা সাগর তীরবর্তী ঝর্ণার নিকট আস্তানা স্থাপন করেন, তিনি সেখান থেকে ইসলাম প্রচার করে চলছেন। ইতিহাসবেত্তাদের মতে, ঐতিহাসিক আনা সাগরের দুই তীরে বহু সংখ্যক মন্দির বিদ্যমান ছিল। এখানে এসে তিনশত পূজারী পূজা করত। দেশর নামি দামি ব্যক্তিবর্গ ও রাজ পরিষদের লোকজন মাঝে মাঝে এসে এই সকল মন্দিরে পূজা করত। ইতিহাস বেত্তাদের মুখে একথাও শুনা যায় মন্দিরে প্রতিদিন তিন মন তেল খরচা হতাে। বহুদিন ধরে পূজা সাধনের কাজ নির্বিঘ্নে চলে আসছিল। একদিন সন্ধ্যার সময় পূজারীরা মধুমাখা আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে জজ ফকীরের স্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে গেল।

পূজারীগণ রাজ সিংহাসনে গিয়ে অভিযােগ করল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় অভিযোগ শুনে রাজা ক্রোধান্ধ হয়ে সেই মুহূর্তে একদল সিপাহী প্রেরণ করলেন। সত্যি কথা বলতে হয় রাজার আদেশ পেয়ে সিপাহীরা রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ সাবের উপর খেপে গেল। আক্রোশ করে খ্যান্ত হলেন না, বরং খাজা সাহেবকে তাড়াইয়া দিতে উদ্যত হল। রাজকীয় সৈন্য বাহিনীয়রা সূফী কুলের শিরমণি হযরত খাজা সাহেবের নিকটবর্তী হয়ে নানা প্রকার গালাগালি বর্ষণ করতে লাগল। এদিকে সত্যের সৈনিক হযরত খাজা সাহেব আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। রাজকীয় সৈন্যবাহিনীরা যে তাকে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ দিতেছে সেদিকে মােটই তার খেয়াল ছিল না। যাই হােক খাজা সাহেব ধ্যান শেষে তাদেরকে নরমভাবে জিজ্ঞেস করলেন তােমরা কি চাও? সত্যি, তোমাদের আমি বলি তােমরা সামনে আর এক কদমও এসাে না, তাহলে তােমাদের উপর আল্লাহর গজব বর্ষিত হবে।

খাজা বাবার জীবনী ও ইতিহাস পাঠে জানা যায়, রাজকীয় বাহিনী খাজা সাহেবের এই আদেশ অমান্য করে সামনে অগ্রসর হতে লাগল। অগত্য খাজা সাহেব তাদের দিকে এক মুষ্ঠি ধূলি নিক্ষেপ করলেন। সত্যি, ধূলি নিক্ষেপ করা মাত্রই রাজকীয় বাহিনীর সৈন্যদল পাগল হয়ে চিৎকার করতে করতে পালায়ে বাঁচল। ইতিহাস বেত্তাদের কাছে একথা সুস্পষ্ট যে সৈন্য দলের কেউ অন্ধ, কেউ বধির, কেউ খঞ্জ আর কেউ মাতাল হয়ে গেলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজার নিকট এই অলৌকিক কাজের কথা পৌছাল। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ এখান থেকেই অনুধাবন করতে পারেন যে, সত্যের সেনানী সূফী সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী কত উচ্চ পর্যায়ের আল্লার ওলী ছিলেন।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

গরীবে নেওয়াজ এর কারামত

রামদেব ও অজয় পালের ইসলাম গ্রহণঃ

 

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় পৃথ্বিরাজ ভাবছিলেন যে আলেমকূলের শিরমণি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ একজন অসামান্য যাদুকর, এই চিন্তা ভাবনা করার পর শেষ পর্যন্ত তৎকালীন নামকরা যাদুকর রামদেব ও অজয় পালকে তলব করলেন। আর আদেশ পেয়ে তারা তড়িৎগতিতে খাজা সাহেবের নিকট হাজির হল। ঐ সময়, সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। তাদের আগমনে ধ্যান ভঙ্গ করে তাদের প্রতি জ্যোতির্ময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। একথা সর্বদা মনে রাখতে হবে হেদায়েত করার মালিক একমাত্র আল্লাহই, সত্যিই মুহূর্তের মধ্যে রামদেব ও অজয় পালের হৃদয়ে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা দেখা দিল। মহান করুণার আঁধার আল্লাহ জাল্লা শানুহুর কুদরত কে বুঝতে পারে? তাৎক্ষণিকভাবে তারা রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা সাহেবের পদপ্রন্তে লুটিয়ে পড়ল এবং ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নিল । ( মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে )

 

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ একটু ভেবে দেখুন আল্লার অলীকে তাড়াতে এসে তারা নিজেরাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করলেন। আলেমকূলের শিমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রামদেবের ইসলাম গ্রহণ করার পর তার নাম রাখলেন ‘মুহাম্মদ সাদী, অভিধান সূত্রে জানা যায়, সাদী অর্থ ভাগ্যবান। পরবর্তীতে রামদেব কামেল ওলী হিসেবে সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। অজয় পাল ইসলাম গ্রহণ করার পর খাজা সাহেব তার নাম রাখেন আবদুল্লা বিয়ানী।

পৃথিরাজের উপর খাজা সাহেবের অভিশাপ

পৃথিরাজের উপর খাজা সাহেবের অভিশাপ ইহিহাস বেত্তারা বলেন, প্রথম তরাইনের যুদ্বে মুহাম্মদ ঘুরী পরাজিত হয়ে পুনরায় দ্বিতীয়বার যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। অতীব সত্য কথা যে, এই যুদ্ধে পৃথ্বিরাজ বিপুল সৈন্যবাহিনী নিয়ে পরাজিত ও নিহত হলেন। ইতিহাসবিদগণ ও ইসলামী জ্ঞানতাপসগণ বলেন, দ্বিতীয় তরাইনের যুদ্ধের পশ্চাতে সূফী কুলেল শিরমণি হযরত খাজা সাহেব-এর অভিশাপ খুবই কার্যকরী হয়েছিল। প্রথমতঃ সাধককুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ সাহেব পৃথ্বিরাজকে ইসলাম গ্রহণ করবার জন্য এক চিঠিতে দাওয়াত দিয়েছিলেন। খাজা সাহেব তার মূল্যবান চিঠির মধ্যে উল্লেখ করেন যে, পৃথ্বিরাজ একথা সর্বজন বিদিত যে, মূর্তি অচেতন পদার্থ তার কোন শক্তি নেই। সে মানব জাতির কোন প্রকার উপকার করতে পারে না। মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহ এক, অদ্বিতীয় তার কোন শরীক নেই। অতএব, তুমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সােনালী ইতিহাসের নির্মল আদর্শ অনুযায়ী জীবন গঠন কর। তোমার উপর আল্লাহর রহমতের করুণা বর্ষিত হবে।

 

খাজা সাহেবের চিঠি পেয়ে পৃথ্বিরাজ ক্রোধে উন্মাদ হয়েছিলেন। দ্বিতীয়তঃ পৃথ্বিরাজ খাজা সাহেবের এক ভক্ত মুরীদ কর্মচারীকে অন্যায়ভাবে চাকুরী হতে বরখাস্ত করায় খাজা সাহেব একথা শুনে এক টুকরাে কাগজে লিখে পাঠান “আমি তোমাকে জীবিত অবস্থায় মুসলিম সৈন্যদের হাতে সােপর্দ করলাম। প্রিয় পাঠকপাঠিকাগণ রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা খাজা সাহেবের এই অভিশাপ সত্যে পরিণত হয়েছে, তা একটু খেয়াল দিয়ে শুনুন এবং চিন্তা করে দেখুন খাজা সাহেব কতদূর আল্লাহ ওয়ালা ছিলেন।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

চিশতীয়া তরীকা ?

 

একথা সর্বজন বিদিত যে ইলমে মারেফাতের অনেকগুলি তরীকার মধ্যে চারটি তরীকাই আসল, যথাঃ-চিশতীয়, কাদিরীয়া, নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় চিশতী হিন্দুস্থানের একটি গ্রামের নাম । সাধক ‘কুলের শিরমণি সত্যের সৈনিক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ ও তরীকার অধিকাংশ তাপসগণ এই গ্রামে অবস্থান করতেন বলে তার নামানুসারে তাদের প্রবর্তিত তৈরিকার নাম চিশতীয়া তরীকা হয়েছে। ইতিহাস, বেত্তারা বলেন, চিশতিয়া তরিকা যদিও খাজা সাহেবের আগেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই তরীকার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করে তারই সময় হতে। এই তরিকার অজিফা ও আমল অত্যন্ত সহজ ও সরল হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ অতি সহজে এই তরীকার চর্চা ও অনুসরণ করতে সক্ষম হয়।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

খাজা বাবার কতিপয় বিশেষ উপদেশাবলীঃ

 

বিভিন্ন সময়ে সূফী সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ নিজ শিষ্যবর্গকে যে সব মূল্যবান নসীহত প্রদান করেছেন তার তুলনা হয় না। নিম্নে তার কতিপয় নসীহত দেওয়া হলঃ

১। এলেম গভীর সাগর সাদৃশ্য, মারেফত উহার তরঙ্গ।

 

২। দান করলেই খােদায়ী নেয়ামত লাভ করা সম্ভব।

 

৩। আরেফের(কামেল লোকের) নিদর্শন এই যে, তিনি মৃত্যুকে বন্ধু মনে করেন এবং প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে তিনি খােদাকে স্মরণ করেন।’

 

৪। মুহাব্বতের নিদর্শন এই যে, বান্দা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে এবং সাথে সাথে তার এ ভয়ও থাকবে যেন তার নৈকট্য হতে সে বঞ্চিত না হয়।

 

৫। পিতামাতার দিকে ভক্তিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানও এবাদত।

 

৬। হতভাগা সেই লােক, যে নিজেকে গুণাহর কাজে লিপ্ত করে।

 

৭। পরিশ্রম ব্যতীত কোন কিছুই লাভ করা সম্ভব নয়।

৮। চার শ্রেণীর লােক খুবই ভালঃ ১মঃ যে দরবেশ সর্বদা নিজেকে ধনী মনে করে। অর্থাৎ সম্বলহীন হওয়া সত্ত্বেও যে নিজের দারিদ্র কখনও প্রকাশ করে না। ২য়ঃ যে ক্ষুধার্ত নিজেকে তৃপ্ত ভাবে, ৩য়ঃ যে চিন্তাক্লিষ্ট বিপন্ন সর্বদা হাসিমুখে থাকে, ৪র্থঃ যে লােক শত্রুর সহিত বন্ধু সুলভ আচরণ করে।

 

৯। সর্ব প্রথম যে বিষয়টি মানুষের উপর ফরয করা হয়েছে, তা হল আল্লাহর মারেফত।

 

১০। তাওবার শুরু কয়েকটি-জাহেলের সংসর্গ পরিত্যাগ করা, ভ্রান্তিদের থেকে দূরে থাকা, অবিশ্বাসীদের সান্নিধ্য পরিহার করা, খােদার প্রিয় বান্দাদের সােহবত অবলম্বন করা ও নেক কাজে মনােনিবেশ করা ।

 

১১। নেক করার চাইতে নেককারের সােহবত যত উত্তম, পাপ করার চাইতে পাপীর সােহবত তত খারাপ।

 

১২। কোরআন শরীফ, কাবাগৃহ, পিতামাতা, আলেম ও ওস্তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা এবাদতের শামিল।

 

১৩। আরেফ(কামেল লোক) যখন নীরব থাকেন,তখন তুমি মনে করবে তিনি প্রভুর সাথে কথা বলতেছেন।

১৫। ঐ ব্যক্তি প্রকৃত দরবেশ যার কাছে এসে কোন লােক খালি হাতে ফেরত যায়না।

 

১৬। ভালবাসার প্রকৃত দাবীদার ঐ সকল লােক, যারা সর্বদা বন্ধুর কথা শুনতে ভালোবাসে।

 

১৭। সত্যিকার বন্ধু ঐ ব্যক্তি, যে বন্ধুর দেওয়া বিপদকে হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করে।

 

১৮। একজন মুসলিম ভাইকে বেইজ্জতি বা অপদস্থ করলে যত ক্ষতি হয় সারাজীবন গুনার কাজে লিপ্ত থাকলেও তত ক্ষতি হয় না। |

 

১৯। যে সকল কথা বা কাজ আল্লাহ পাক অপছন্দ করেন, বান্দাও যদি সেই সকল কাজ ও কথা ঘৃণা করতে শিখে, তবেই তার দােস্তী সে অনায়াসে লাভ করতে পারে।

 

২০। ক্ষুধার্তকে অন্নদান, অভাগ্রস্তের অভাবপূরণ ও শত্রুর সাথে সদাচরণ, চরিত্রের বিশেষ গুণ।

 

২১। ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত প্রেমিক যার ইহলােক ও পরলােকের সকল আশা ত্যাগ করে একমাত্র মহান মাহবুব আল্লাহ তায়ালার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।

 

২২। কোন লােক ততক্ষণ আরেফ(কামেল) হতে পারে না, যতক্ষণ না সে নিজ অস্তিত্ব একেবারে ভুলে না যায়।

 

২৩। প্রেমের পথে যে অটল থাকে, প্রেমাগ্নি তার অস্তিত্বকে বিলোপ করে দেয়।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী

ইন্তেকাল ও দাফনঃ

একথা সর্বজন বিদিত যে মানুষ মরণশীল। জন্মিলে মরতে হয়। এ নীতির উপর ভিত্তি করে বিশ্ব নিয়ন্তা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের প্রিয় হাবীব নিখিল বিশ্বের ত্রাণকর্তা সুপারিশের কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মত নবীও মৃত্যুর শীতল স্পর্শ হতে পরিত্রাণ পাননি। অতপর রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাপাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ ও একদিন চীর বিদায়ের ইঙ্গিত প্রাপ্ত হলেন তার মহা প্রস্থানের সময় ঘনাইয়া আসল। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তার মৃত্যু সম্বন্ধে কথিত আছে যে আলেমকুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী যে রাত্রে ইহধাম ত্যাগ করেছিলেন, সেই রাত্রিতে বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের অসংখ্যক অলীআল্লাহ থাকে দেখতে পান যে সাইয়্যেদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলতেছেন মঈনুদ্দীন আল্লাহ পাকের বন্ধু । আমরা তাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করবার জন্য আগমন করছি ।

 

ইতিহাস বেত্তরা বলেন, হিজরী ৬২৭ সালের ৬ই রজব তারিখে ইশার নামাজ আদায় করবার পর সুফী সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রাহঃ) নিজ কক্ষে ঢুকলেন এবং ভিতর হতে উক্ত কামরা বন্ধ করে দিলেন, ক্রমে ফজরের সময় হল। অতীব দুঃখের বিষয় হল প্রতিদিনের মত আর হুজুরার দরজা খুলল না। খাদেমগণ অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পরিশেষে দরজা ভেঙ্গে দেখা গেল যে সূফী সাধক রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী সাহেবের প্রাণ বায়ু শেষ হয়ে গেছে। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। খাজা সাহেবের ইহধাম ত্যাগের সংবাদ শুনে জনসাধারণ অত্যন্ত মর্মাহত হয়। দেশ বিদেশ হতে মানুষের ঢল নেমে আসল। তার জানাযার নামাজে অসংখ্য লােক শরীক হন। তার সুযােগ্য পুত্র খাজা ফখরুদ্দীন রহমতুল্লাহ জানাযার নামাজ পড়ান। তিনি যে হুজরায় মৃত্যু বরণ করেন সেই দুজরাতেই তাকে দাফন করা হয়।

ইমাম আবু হানিফা-মুসনাদে আবু হানিফা

ইমাম আবু হানিফা-মুসনাদে আবু হানিফা

একবার কয়েকজন মহিলা এলেন সুবিখ্যাত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্নটি হল, একজন পুরুষের এক সঙ্গে চার জন স্ত্রী রাখার অনুমােদন আছে। কিন্তু একজন স্ত্রী এক সঙ্গে দু’জন স্বামী গ্রহণ করতে পারে না, এর কারণ কি?

গুরুতর প্রশ্ন। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সেই মুহূর্তে এর উত্তর দিতে পারলেন না। তিনি অন্তঃপুরে এলেন। আর তাঁর বিদুষী বুদ্ধিমতী কন্যার কাছে প্রশ্নটি উত্থাপন করলেন। কন্যা বললেন, আপনি যদি আপনার নামের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত করেন, তাহলে আমি এর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারি। পিতা তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, মহিলাদের তােমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি মা। তুমি তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে দেবে।

তাই হল। মহিলারা তাঁর কাছে এলেন। তিনি তাদের সাবইকে একটি ঘরে পেয়ালায় কিছু দুধ আনতে বললেন। দুধ আনা হল। এবার অন্য একটি বড় পেয়ালায় প্রত্যেকের আনা দুধ ঢালতে বলা হল। মহিলারা তাও করলেন। সকলের আনা দুধ বড় পেয়ালায় মিশে গেল। তিনি আবার বললেন, এবার আপনারা যে যতটুকু দুধ এনেছেন, তা আবার আলাদা করে দিন।Imam Abu Hanifa (RA)

তারা বললেন, তা কি সম্ভব? তিনি বললেন, তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনারাই বলুন, কোন এক মহিলার একাধিক স্বামী থাকলে আর সন্তান ভূমিষ্ট হলে তা কোন স্বামীর সন্তান তা চেনবার উপায় কী?

এ প্রশ্নের আর উত্তর দেবার দরকার হল না। মহিলারা বললেন, প্রশ্নের জবাব আমরা পেয়ে গেছি। খুব খুশী হয়ে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মেয়ের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে করতে তারা চলে গেলেন। খুশী ইমাম সাহেবও তাঁর কথামতাে ঐ দিন থেকেই তিনি তাঁর প্রিয় কন্যার নাম নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিলেন। তার নতুন নাম হল আবু হানিফা। অর্থাৎ হানিফার পিতা। কন্যার নাম ছিল হানিফা। মহাকালের পৃষ্ঠায় পিতা-পুত্রীর নাম চিরদিনের মতাে মুদ্রিত হয়ে গেল।

বিশ্ব-নন্দিত ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ-এর আসল নাম নােমান। পিতার নাম সাৰিত। আর চিরভাস্বর উপাধি হল, ইমাম আজম-ইমামগণের ইমাম, শ্রেষ্ঠ ইমাম। তার সূর্যসম প্রতিভার আলােক-ধারায় শুধু শরীয়ত আর মারেফাতই উদ্ভাসিত হয়নি, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর অন্তর্জোতিও বিস্তীর্ণ হয়েছে। সূক্ষাতিসূক্ষ্ম মাসআলা-সমূহের সমাধানে ও জটিলতম বিষয়-সমূহের মর্মোদঘাটনে তিনি যে নৈপুণ্য ও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, জগতে তার কোন তুলনা নেই। বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী এই মহাপন্ডিত সাহাবায়ে কেরাম ও শ্রেষ্ঠ ওলী আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহচর্য লাভ করেন। যাদের সাহায্য লাভ করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন- আনাস ইবনে মালেক, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে রুমী, ওয়াসেক বিন ওয়ারাকা রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।

হযরত জাফর সাদেক রহমাতুল্লাহ তার পরম বন্ধু ছিলেন। হযরত ফোজায়েল রহমাতুল্লাহ, ইব্রাহীম আদহাম রহমাতুল্লাহ, বিশর হাফী রহমাতুল্লাহ, দাউদ তায়ী রহমাতুল্লাহ প্রমুখ তাপসগণের তিনি ছিলেন মারেফাত বিদ্যার শিক্ষক। আর শরীয়তী শিক্ষাধারায় তার উজ্জ্বল শিষ্যগণ হলেন ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহ, ইমাম আবু ইউসুফ রহমাতুল্লাহ ও ইমাম মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ অন্যান্য জ্যোতিষ্ক।

কথিত আছে, পাক রওজায় উপস্থিত হয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সম্বােধন করে বলেন, আস্সালামু আলাইকুম ইয়া সাইয়্যিদাল মুরসালীন- হে রাসূলগণের সর্দার, আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হােক। তখন রওজা মুবারক থেকে জবাব আসে, ওয়া আলাইকুমুস সালামু ইয়া ইমামাল মুসলিমীন- হে মুসলিমগণের ইমাম, আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হােক।

স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাকে মুসলিমগণের ইমাম বলে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছেন, তার মর্যাদা কোথায় গিয়ে পৌছায়, চিন্তা করলে আবেগ আপুত হতে হয়। তিনি এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলেন এক রাতে রাসূলুল্লাহর পাক রওজা থেকে তিনি পবিত্র অস্থি তুলে জমা করছেন এবং একখানা আরেক খানা থেকে পৃথক করছেন। এই স্বপ্ন দেখে ভয়ে অস্থির হয়ে তিনি জেগে উঠলেন এবং বিখ্যাত স্বপ্নবিশারদ আল্লামা ইবনে সবীনের এক শিষ্যের কাছে গিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইলেন। তিনি বললেন, এ স্বপ্নের অর্থ আপনি মহানবীর জ্ঞানরাজী, ফেকাহ ও হাদীসশাস্ত্রে এরূপ বুৎপত্তি লাভ করবেন। এ ছারাও উক্ত শাস্ত্র-সমূহের ভাষ্যকার হবেন। আর সত্যকে অসত্য থেকে পৃথক করার ক্ষমতা আল্লাহ আপনাকে দান করবেন। বলাবাহুল্য, এ স্বপ্ন আক্ষরিক অর্থে ফলবতী হয়। তিনি আরও একবার স্বপ্ন দেখেন, নবী মুস্তফা (সাঃ) তাঁকে সম্বোধন করে বলছেন, হে আবু হানিফা, আল্লাহ আপনাকে আমার সুন্নত তরীকা জীবিত রাখার জন্য সৃষ্টি করেছেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। নির্জনবাস করবেন না। শরীয়তের বিধান রক্ষার তিনি ছিলেন এক অতন্দ্র প্রহরী।

এ বিষয়ে একটি ঘটনা অবশ্যই উল্লেখযােগ্য। তখন মুসলিম দুনিয়ার খলীফা আল মনসুর। তিনি বাগদাদের প্রধান কাজী ও অন্যান্য ওলামাকে ডেকে পাঠালেন। তারা এসে উপস্থিত হলেন। ওদিকে খলীফা মনসুর তার এক বিশেষ অনুচরকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন খলীফার প্রত্যেক সহচরের নামে কিছু কিছু জমি-জায়গা লিখে দেন। নির্দেশ অনুযায়ী সে কাজও সম্পন্ন হল। তারপর সাক্ষীস্বরূপ দস্তখত নেবার জন্য খলীফা তার এক সহচর মারফত দলিলগুলি পাঠিয়ে দিলেন প্রধান কাজী সাহেব ও অন্যান্য আলেমদের কাছে। প্রথমে প্রধান কাজী ও পরে অন্যান্য সই দিলেন। কিন্তু বেঁকে বসলেন আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ। সই না করে রাজকর্মচারীকে জিজ্ঞেস করলেন, খলীফা এখন কোথায় কর্মচারী জানালেন, তিনি এখন বালাখানায়। ইমাম আজম বললেন, হয় আমাকে ওখানে নিয়ে চলুন না হয় তাকে এখানে আসতে বলুন। তবে সাক্ষ্য সঠিক হবে। কর্মচারী বললেন, প্রধান কাজীসহ সবাই যখন সই করছেন, তখন আপনি অযথা আপত্তি করছেন কেন? ইমাম আবু হানিফা বললেন, সে জেনে আপনার কাজ নেই। যা বলছি, করুন।

শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা খলীফার কানে গেল। তিনি প্রধান কাজীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি দস্তখত করার সময় তা উপস্থিত থেকে শুনেছেন বা দেখেছেন? কাজী জবাব দিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, সেগুলি আপনার ইচ্ছাক্রমেই হয়েছে। তাই উপস্থিতির প্রয়ােজনবােধ করিনি। খলীফা বললেন, আপনার এ কাজ ন্যায়সঙ্গত হয়নি। তাই আপনাকে আপনার পদ থেকে খারিজ করলাম। অতঃপর প্রধান কাজীর পদে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে যেকোন একজনকে নিযুক্ত করার কথা ভাবা হল। এঁরা হলেন- ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান, শােয়হ ও ইমাম শা’বী । তাদের দরবারে ডাকা হল। একই সঙ্গে আসছিলেন তারা। পথিমধ্যে ইমাম আবু হানিফা বললেন, শুনুন, আমি যে কোনভাবে হােক, এই পদ গ্রহণ করব না, সুফিয়ান আপনি সরে পড়েন। শাবী পাগলের ভান করুন। আর শােয়হ পদটি গ্রহন করুন। তার এ পরামর্ষে সুফিয়ান সত্যিই সরে গেলেন। বাকী তিন জন দরবারে হাজির হলেন।

খলীফা প্রথমে ইমাম আবু হানিফা (রাঃ)-কে পদটি গ্রহণ করার অনুরােধ জানালেন। তিনি বললেন, আমি আরবের লােক নই। অতএব আর প্রধানগণ সহজে আমার হুকুম মানতে চাইবে না। জাফর বারমাকী নামে একজন আমীর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, গােলের সঙ্গে এ পদের সম্পর্ক কি? এবার ইমাম বললেন, আমি এ পদের যােগ্য নই। এর প্রমাণ হল, আমার এ কথা হয় সত্য, নয় মিথ্যা হবে। সত্য হলে তাে আমি এ পদের উপযুক্ত নই। আর যদি মিথ্য হয়, তাহলে একজন মিথ্যাবাদীকে এরূপ দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা ঠিক নয়। একথা বলে আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ রেহাই পেলেন।

ইমাম শা’বী খলীফার হাত ধরে বললেন, জনাব, আপনি ভালো আছেন তো! আপনার পরিবার-পরিজন কেমন আছেন, খলীফা তার কথাবার্তর ধরন দেখে বুঝলেন, নিশ্চয় ভদ্রলােকের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।

এবার শােরায়হের পালা। তিনি বললেন, আমার মস্তিষ্ক অত্যন্ত দুর্বল। আমার পক্ষে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব নয়। তার কথা শুনে খলীফা বললেন, আপনি চিকিৎসা করান। রােগ সেরে যাবে। শেষ পর্যন্ত সােরায়হকেই কাজীর পদে বহাল করা হল। এরপর হতে আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ শােয়হর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। এমনকি তার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করলেন।

কাজীর পদ গ্রহণ না করার কারণ হল, তখনকার আলেমগণ প্রায় সকলেই স্বাধীনচেতা ছিলেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যাকে কাজী নির্বাচিত করা হয়েছে, তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এ মন্তব্য জানা ছিল বলে তারা এ ব্যাপারে খুবই সন্ত্রস্ত ছিলেন।

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর বৈঠক শুরু হয়েছে। পাশে কয়েকটি ছেলে বল খেলছিল। হঠাৎ বলটি একবার এসে পড়ল আসরের মাঝখানে। আর কোন বালকই সেটা নিতে সাহস করল না। কিছুক্ষণ পরে একটি ছেলে সভাস্থ কাউকে সমীহ না করে, বলটি আসর থেকে তুলে নিয়ে গেল। তার হাবভাব দেখে ইমাম বললেন, এ নিশ্চয় কোনও জারজ সন্তান। এতটুকু লজ্জাবােধ নেই, এরপর জানা গেল, তার কথাই সত্য। প্রকৃতই ছেলেটি এক অবৈধ সন্তান।

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর ধর্মনিষ্টা কিংবদন্তিতুল্য। একবার কোন এক লােক তার থেকে টাকা ধার নেয়। লােকটির বাড়ী যে পল্লীতে সেখানে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর এক শিষ্য মারা যায়। তিনি সেখানে গেলেন তার জানাযা আদায় করতে। তখন দুপুর। প্রচণ্ড গরম আর রােদও তত্র। সেখানে ঐ টাকা ধার গ্রহণকারীর দালানের ছায়া ছাড়া মাথা বাঁচানাের আর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু সকলের অনুরােধ সত্ত্বেও ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ ঐ জায়ায় গিয়ে দাঁড়ালেন না। বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কাউকে কিছু ধার দিয়ে তার থেকে কোন উপকার গ্রহণ করবে না। অতএব, তার দালানের ছায়ায় আরাম ভোগ করা ঠিক হবে না। কেননা, তা হবে সুদ গ্রহণের মতাে।

দাউদ তায়ী রহমাতুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ বিশ বছর ধরে তিনি তার সেবায় রত থেকেও তাকে প্রকাশ্যে বা গােপনে খালি মাথায় কখনও বসে থাকতে দেখেননি অথবা অবসন্ন অবস্থায় কোনদিন পা ছড়িয়ে বসেননি। যেখানে কোন লােকজন নেই, সেখানে একটু পা ছড়িয়ে বসলে কী? তার এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, সেখানেও আল্লাহর সঙ্গে শিষ্ঠাচার রক্ষা করা চাই।

প্রতি রাতে তিনি তিনশ রাকাআত নফল নামাজ পড়তেন। একদিন তার কানে এল, এক মহিলা অন্য এক মহিলাকে বলছেন, ইনি প্রতি রাতে পাঁচ’শ রাকাআত নফল নামাজ পড়েন। সেদিন থেকে তিনি পাঁচ’শ রাকাআত নফল নামাজ পড়তে শুরু করলেন। আবার একদিন তাকে দেখিয়ে কয়েকজন লােক বলাবলি করছিল, ইনি রােজ রাতে হাজার রাকআত নফল নামাজ আদায় করেন। সেদিন থেকে তিনি সত্যিই হাজার রাকআত নামাজ পড়তে লাগলেন। আরও কিছুদিন পর তার এক শিষ্য এসে বললেন, লােকের মুখে শুনা যায়, আপনি সারা রাত নামাজে কাটিয়ে দেন। সেদিন থেকে সত্যিই তিনি সারারাত নফল নামাজে রাত কাটাতে শুরু করলেন। আর তখন থেকে একটানা ত্রিশ বছর এশার অযুতে ফজর আদায় করতেন। মানুষের উচ্চ ধারণার কী অপরিসীম মূল্য তিনি দিয়েছেন।

হযরত দাউদ তায়ী রহমাতুল্লাহ যখন শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তখন তার কর্তব্য সম্বন্ধে তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর পরামর্শ চান। তিনি বলেন, এখন থেকে তােমার এলেম অনুযায়ী কাজ করা উচিত। কেননা, এলেমানুরূপ কাজ যে করে না, তার দেহ প্রাণহীন গােশত পিণ্ডের মতাে।

একদিন শহরের এক হাম্মামখানায় এক উলঙ্গ ব্যক্তিকে দেখে তিনি চোখ বুজে ফেলেন। লােকটি তাকে বলল, কবে থেকে আপনার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ উত্তর দেন, যেদিন থেকে তােমার হায়া- শরম ভুলে গেছ।

একদিন বাজারে যেতে তার কাপড়ে কিছু কাদামাটি লেগে গেল। তিনি তখনই নদীতে গিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। কেউ তাঁকে বললেন, আপনি যে পরিমাণ ময়লা জায়েয রেখেছেন, এতাে তার চেয়ে কম। না ধুলেও চলত। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি, ওটা ফতোয়ার কথা। আর যা করলাম তা পরহেজগারী। রাসূলে কারীম (সঃ) একদিন হযরত বেলাল (রাঃ)- কে বললেন, কোন সময় আধখানা রুটিও জমা করে রাখবে না। অথচ কোন এক সময় তিনি তার পত্নীদের জন্য প্রায় এক বছরের খাবারও জমা করে রেখেছিলেন।

এক ব্যক্তি ঈর্ষা-প্রণােদিত হয়ে হযরত ওসমান রহমাতুল্লাহ- কে ইহুদী বলত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) একদিন তাকে ডেকে বললেন, আপনার কণ্যার সঙ্গে অমুক ইহুদীর বিয়ে দেব। সে বলল, আপনি নিজে মুসলমান হয়ে ইহুদীর সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চান? ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বললেন, কেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাে ইহুদীর সঙ্গে দু’জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, লােকটি তার কথার মর্ম বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জিত হয়ে তার কাছে তওবা করে ক্ষমা চেয়ে নিল। একদিন এক ধনী ব্যক্তিকে তার ধন সম্পদের জন্যই তিনি একটু বেশ সম্মান দেখান। কিন্তু পরে অনুতপ্ত হয়ে এক হাজার বার কোরআন শরীফ খতম করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি আরও একটি নিয়ম পালন করতেন। কোন কঠিন মাসআলার সম্মুখীন হলে চল্লিশ বার পবিত্র কোরআন খতম করে সমাধানে রত হতেন।

তৎকালীন খলীফা রাতে স্বপ্ন দেখলেন, আজরাইল ফেরেশতাকে তার আয়ুর কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের দিকে ইশারা করে দেখালেন। বিভিন্ন গণ্ডিতের কাছের স্বপ্নের ব্যাখ্যা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি হযরত আবু হানিফা রহমাতুল্লাহকে ধরলেন। তিনি বললেন, পাঁচটি আঙ্গুল দ্বারা পাঁচটি বিষয়ের ইঙ্গিত করা হয়েছে- যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। সেগুলি হলঃ

(১) কিয়ামত কবে হবে, (২) বৃষ্টি কখন হবে, (৩) কয়টি সন্তান হবে (৪) কোন্ জায়গায় কার মৃত্যু হবে ও (৫) আগামীকাল কী ঘটবে।

হযরত আবু আলী রহমাতুল্লাহ বলেন, তিনি এক রাতে হযরত বেলাল রহমতুল্লাহ -এর কবরের পাশে শুয়েছিলেন। সে রাতে স্বপ্ন দেখেন, তিনি যেন মক্কায় আছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বৃদ্ধকে শিশুর মতাে কোলে নিয়ে বনী শায়বা দরজা দিয়ে বের হয়ে এলেন। তিনি তাড়াতাড়ি গিয়ে তার কদমবুসি করলেন। তিনি তখন অবাক হয়ে ভাবছিলেন নবী করীমের কোলে কে এই বৃদ্ধ? নবীজী বললেন, ইনি মুসলিমদের ইমাম আবু হানিফ। নওফেল ইবনে হাইয়ান বলেন, ইমাম আবু হানিফা এর মৃত্যুর পর তিনি স্বপ্ন দেখেন কিয়ামত হয়ে গেছে। সমস্ত মানুষ হাশরের মাঠে হাজির। রাসূলে কারীম (সঃ) দাড়িয়ে আছেন হাওজে কাওসারের কাছে। তার ডানে-বামে প্রচুর বিজ্ঞানীর ভিড়। তিনি দাড়িয়ে আছেন মহানবীর দিকে মুখ করে। ইমাম সাহেব রয়েছেন তাঁর পাশে। আমি তাকে সালাম করে বললাম, আমাকে একটু পানি পান করান। তিনি জবাব দিলেন, নবীজী নির্দেশ দিলে পানি দিতে পারি , রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নির্দেশে আমাকে পানি দেওয়া হল। পানি পান করে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পাশে উনি কে পঁড়িয়ে আছেন? তিনি বললেন, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর বাম পাশে হযরত আবু বকর (রাঃ)। তারপর একে একে অন্যান্য বিশিষ্ট জনের পরিচয় নিয়ে আঙ্গুলের করে গুনে হিসাব করতে লাগলাম। আমি সতেরাে জনের নাম শুনলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম আমার বুড়ো আঙুলটি করের সতেৱাে দাগেই রয়েছে।

আরও পড়তে উইকিপিডিয়ায় দেখুন

খাজা বাবার জীবনী পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

To read Jalaluddin Rumi’s biography click here.

আবু হামিদ আল-গাজ্জালি (রহঃ)

আবু হামিদ আল-গাজ্জালি (রহঃ)

আবু হামিদ আল-গাজ্জালীঃ ইমাম গাযালী (র)-এর নাম মুহাম্মাদ। ডাকনাম আবু হামেদ। পিতার নামও মুহাম্মাদ ছিল। তুস জেলায় ৪৫০ হিজরীতে তাহিরান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার ওসিয়ত মুতাবেক তাঁর এক বন্ধু—যিনি একজন একনিষ্ঠ ‘ইলম-দোস্ত ও সূফী গরীব মুসলমান ছিলেন-তাঁর শিক্ষার বন্দোবস্ত করতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন এবং তাকে কোন মাদরাসায় ভর্তি হবার পরামর্শ দেন। অনন্তর তিনি একটি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে শিক্ষা অর্জনে আত্মনিয়ােগ করেন।

ইমাম গাযালী (র) স্বদেশে শায়খ আহমাদ আর-রাযেকানীর নিকট থেকে শাফিঈ মযহাবের ফিকাহশাস্ত্রে তা’লীম হাসিল করেন। এরপর জর্দানে ইমাম আবু নসর ইসমাঈলীর নিকট পড়াশুনা করেন। এরপর নিশাপুর গিয়ে ইমামুল হারামায়নের মাদরাসায় ভর্তি হন এবং অতি অল্পদিনেই তিনি তার ৪০০ সহপাঠীর মধ্যে একটি বিশিষ্ট আসন লাভ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর খ্যাতিমান উস্তাদের সহযােগী (নায়েব)-তে পরিণত হন, এমন কি ইমামুল-হারামায়ন তার সম্পর্ক বলতেন, “গাযালী (র) হলেন গভীর সমুদ্র।” ইমামুল-হারামায়ন-এর ইনতিকালের পর তিনি নিশাপুর থেকে বহির্গত হন। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২৮ বছর, অথচ তখনাে তাকে বড় বড় বর্ষীয়ান ‘উলামা’র চেয়ে অধিকতর বিশিষ্ট ও কামালিয়তের অধিকারী মনে করা হত।

এর পর ইমাম গাযালী (র) নিজামুল-মুলকের দরবারে যান। তাঁর খ্যাতি ও বিশেষ যােগ্যতার কারণে নিজামুল-মুলক তাকে অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে দরবারে গ্রহণ করেন। এখানে ছিল দুর্লভ রত্নসম। জ্ঞানী-গুণীদের সমাবেশ। জ্ঞানের আলােচনা ও ধর্মীয় মুনাজারা (বিতর্ক) তখনকার দরবার, মজলিস, এমন কি বিবাহানুষ্ঠান ও শােক সভারও একটি অপরিহার্য অঙ্গ ছিল। ইমাম গাযালী (র) যাবতীয় বিতর্ক আলােচনায় সকলের ওপর জয়ী হতেন। তাঁর অতুলনীয় যােগ্যতাদৃষ্টে নিজামুল-মুলক তাঁকে নিজামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসাবে মনােনীত করেন, যা ছিল সে যুগে একজন ‘আলিমের জন্য সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ সােপান। সে সময় গাযালীর বয়স ৩৪ বছরের বেশী ছিল না।Imam Ghazali

৪৮৪ হিজরীতে তিনি বিরাট শান-শওকতের সঙ্গে বাগদাদে প্রবেশ করেন এবং নিজামিয়ায় পাঠ দান শুরু করেন। অল্পদিনেই তাঁর যােগ্য শিক্ষকতা, উত্তম আলােচনা ও জ্ঞানের গভীরতার কথা সারা বাগদাদে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র- শিক্ষক ও জ্ঞানী-গুণী তার বিদ্যাবত্তা থেকে উপকৃত হবার জন্য চতুর্দিক থেকে নিজামিয়ায় এসে ভীড় জমাতে লাগল। তার দরূস-মাহফিল গােটা মনুষ্যকুলের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়। তিন শ’র মত সমাপ্ত পর্যায়ের ছাত্র, শত শত আমীর-উমারা’ ও রঈস এতে শরীক হতেন। ক্রমে ক্রমে তার উন্নত মস্তিষ্ক ও মেধা, ইলমী ফযীলত ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব বাগদাদে এমন প্রভাব-প্রতিপত্তি সৃষ্টি করে যে, তিনি সাম্রাজ্যের নেতৃস্থানীয় সদস্যবর্গের সমমর্যাদা লাভ করেন।

তাঁর সম্পর্কে তাঁর সমসাময়িক শায়খ আবদুল গাফির ফারসী বলেন, “তার জাকজমক ও আড়ম্বরের সামনে আমীর-উমারা’, উযীর, এমন কি স্বয়ং দরবারে খিলাফতের শান-শওকত পর্যন্ত নিষ্প্রভ হয়ে যায়। এমনি সময়ে ৪৮৫ হিজরীতে তাকে ‘আব্বাসী খলীফা মুক ‘তাদী বিল্লাহ মালিক শাহ সালজুকীর বেগম তুর্কান খাতুনের নিকট (যিনি সে সময় সাম্রাজ্যের হর্তা-কর্তা ছিলেন) স্বীয় দূত বানিয়ে পাঠান। খলীফা মুক ‘তাদী বিল্লাহর স্থলাভিষিক্ত খলীফা মুস্তাজহির ইমাম গাযালী (র)-এর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রাখতেন এবং তার একনিষ্ঠ ভক্ত ও অনুরক্ত ছিলেন। তারই নির্দেশে ইমাম গাযালী (র) বাতেনী মতবাদের বিরুদ্বে কিতাব লিখেন এবং খলীফার সঙ্গে সম্পর্কিত করে এর নাম রাখেন ‘মুস্তাজহিরী।

এগার বছরের চলমান জীবন এবং এর অভিজ্ঞতা:

এই চরম উন্নতি ও উত্থানের স্বাভাবিক দাবি ছিল যে, ইমাম গাযালী (র) এতে তৃপ্তি লাভ করবেন এবং এই বৃত্তের মাঝেই তিনি তার গােটা জীবন কাটিয়ে দেবেন, যেমনটি তার কতক উস্তাদ করেছেন। কিন্তু তার অস্থির স্বভাব ও প্রকৃতি, উন্নত মনােবল, দুরন্ত সাহসিকতা উন্নতির এই চরম পর্যায়েও তাকে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত রাখতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে এই উন্নত মনােবল ও হিম্মতই তাঁকে ইমাম’ ও ‘হুজ্জাতুল-ইসলাম বানিয়েছিল। দুনিয়াতে জাঁকজমক, আড়ম্বর, সম্মান ও পদবীর কুরবানী এবং স্বীয় উদ্দেশ্যের প্রতি একাগ্রতা ও সত্যের প্রতি আকর্ষণের এমন দৃষ্টান্ত বিরল। ইমাম গাযালী (র) স্বয়ং সেসব অবস্থা ও কার্যকারণ বর্ণনা করেছেন যা তাকে এমন পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং যা তাকে টেনে বের করেছিল শিক্ষা ও দরস প্রদানের কাজ থেকে। যা হােক, শেষ পর্যন্ত তিনি জ্ঞান রাজ্যের বাদশাহী ছেড়ে নিশ্চিত জ্ঞান ও ইন্দ্রিয়াতীত সম্পদের তালাশে বেরিয়ে পড়েন এবং স্বীয় লক্ষ্যে কামিয়াবী লাভ করেন। ‘Al-Munkiju Minaddalal” নামক গ্রন্থে তিনি এ সম্পর্কে লিখেছেন :- বিস্তারিত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

To read Imam Gazzali Biography in English CLICK here

ইসরাইল

ইসরাইল

We have made them rich and powerful by supplying and using Israeli goods. We are providing a lot of money which they are using to kill children, women, and unarmed people. So we are committed to boycotting Israeli products. We strongly condemn and hate this heinous bombing and genocide from Bangladesh. We demand that it be stopped immediately..—ইসরাইলের পণ্য সামগ্রী সরবরাহ ও ব্যবহার করে আমারাই তাদেরকে বিত্তশালী ও শক্তিশালী বানিয়েছি। আমরা প্রচুর অর্থের যোগান দিচ্ছি যা তারা শিশু নারী ও নিরস্ত্র মানুষ হত্যার কাজে ব্যবহার করছে। সুতরাং আমরা ইসরায়েলী পণ্য বর্জন করার প্রতিশ্রুতি করছি। আমরা বাংলাদেশ থেকে এই বর্বরোচিত জঘন্য বোমা হামলা ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি।

কবিতা-জনম

কবিতা-জনম

কবিতা

জনম যদি দাও বিধি

যোগী কূলে দিও

না হয় এবার আমায় বিধি

পরম আত্নায় নিও।

জনম দিও যোগী কূলে

না হয় নিও পরম কূলে

না হয় এবার আমায় বিধি

মহামিলন দিও ।।

যোগী কূলে দিও।

আমার জন্ম আমার মৃত্যু

আমার কর্মফল

মায়ার দ্বারা কিনলাম ভবে

জগতের বন্ধন

বিধি আমার মায়ার বন্ধন

ভেঙ্গে ছুড়ে দিও।

যোগীকূলে দিও।

আরও কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।