প্রবন্ধ- প্রত্যেকেই আমরা নিজের কৃতকর্ম ও চরিত্রাদর্শ সম্পর্কে অবগত রয়েছি…
প্রবন্ধঃ প্রতীয়মান সত্য বা বাস্তবতাকে অস্বীকার, অবহেলা, অমান্য বা আড়াল করে কখনো আত্মতৃপ্তি বা মানসিক সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। ইহা প্রত্যেকেই জানেন, বুঝেন এবং মানেন। কিন্তু নিজেকে মোটা মাথা, বেশী মগজ বা বড় কিছু বুঝাতে, নিজের গোনাহ বা অনৈতিক চরিত্রের পাপাচার ঢেকে রাখতেই আমরা বাধ্যতামূলক বাস্তব সত্যটাকে চাপা দেই! পাশ কেটে যাই! অস্বীকার অবমূল্যায়ন বা আড়াল করার অপচেষ্টা করি মাত্র।
মূলতঃ সত্য বা বাস্তবতার কাছে আমরা নিরঙ্কুশ পরাজিত, ব্যর্থ বা অযোগ্য। যা আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে সুস্পষ্ট স্বাক্ষী প্রদান করছে। প্রত্যেকেই আমরা আমাদের কৃতকর্ম বা চরিত্রাদর্শ সম্পর্কে অবগত রয়েছি।
আপনি আমি যত বড় পাপাচার, বেঈমান মিথ্যাচার, বিশ্বাস ঘাতক মূনাফেক কিংবা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হই না কেন; নিজ অন্তরের সাথে বেঈমানী, ধোকাবাজী কিংবা ছয়/নয় করার কোন সুযোগ বা ক্ষমতা আমাদের কারো নেই। ইহা’ই একমাত্র ইস্পাত কঠিন সত্য। আর এই অন্তরেই উপলব্ধি হবে তোমার নিজের জয় পরাজয়, সফল ব্যর্থ ও যোগ্য অযোগ্যের নিখুঁত হিসাব নিকাশ। আমরা প্রত্যেকেই তা জানি এবং নির্দ্বিধায় তা বুঝতে পারি। যতই লোকসমাজে আমরা স্ববিরোধী কথা বলে নিজেকে শুদ্ধ সঠিক ও জ্ঞানী বুঝাতে চাপাবাজী বা মিথ্যাচারী নগ্ন অপচেষ্টায় লিপ্ত হইনা কেন; মূলতঃ এর শুদ্ধ সঠিক ও নগদ হিসাব আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে রয়েছে। অন্তরই প্রতিটি মানুষের জলজ্যান্ত ও প্রাণবন্ত স্বাক্ষী। প্রতিটি কর্মের ফলাফল, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া এখানেই অনুভূত হয়। সুখ-দুঃখ, শান্তি-অশান্তি, আত্মতৃপ্তি বা অসহ্য যন্ত্রণা, বিমুগ্ধতা কিংবা হৃদয়ে তুষেরআগুন জ্বলে পুড়ে খুঁড়ে খুঁড়ে খাওয়া বা তিলেতিলে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এবং আনন্দ-বেদনা সবই অন্তরে ক্রিয়াশীল, অন্তরে স্পন্দিত ও উপলব্ধিত হয়। অন্তরেই সর্বপ্রথম সংকেত, উৎপত্তি, সূত্রপাত বা অনুভূতি কাজ করে। তাই অন্তরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বা আত্মবিশ্বাসী হউন। নিজ অন্তরের বিরুদ্ধে চাপাচাপি মিথ্যাচারী ও ধোঁকাবাজি করে নিজেকে কখনো সম্মানি বা ছহিশুদ্ধ বানোনো যায় না। আপনার বাজারদর কিংবা পরিমাপের খাটি হিসাব যেমন আপনার অন্তরে রয়েছে তেমনি এই সচেতন সমাজেও রয়েছে।
তাই বলছিলাম, এই অন্তরে যদি আত্মতৃপ্তবোধ, প্রশান্তি, মনোমুগ্ধতা, আনন্দ বা প্রফুল্লতা অনুভূত বা স্পন্দিত বা উৎপত্তি না হয়, যদি সৃষ্টি বা সূচনা না হয়- তাহলে এই মিথ্যাচার, চাপাবাজী, অনৈতিক বা অযৌক্তিক ও স্ববিরোধী বা আত্মঘাতী চরিত্রায়ন করে কি লাভ? অন্তরে তো অশান্তি থেকেই যাবে! আহ্!!
তুষেরআগুনে জ্বলে পুড়ে খুঁড়ে খুঁড়ে খাওয়া বা যন্ত্রণালব্দ তিলেতিলে তা উপভোগ্য করার মানে কি?
তা বুঝে উঠা তাদের জন্য খুবই কঠিন। বোকার রাজ্যে বসতকারী কাণ্ডজ্ঞানহীন মূর্খগণ, গ্রন্থগত বিদ্যা ও মোটামোটা সনদধারী মোটামাথার বেকুবগণ মূলতঃ হিংসা ও অহমিকা পরায়ণ। বিকৃত মস্তিষ্ক, অদৃশ্যে ঢিল ছুড়া এবং সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ মানসিকতা তাঁদেরকে মনুষ্যহীন পশুত্বে বা প্রেতাত্মায় আবদ্ধ করে রাখে। তাই তারা মানুষরূপী পশু বা শয়তান।
একটু বিবেকবোধ পয়দা হলে কিংবা অন্ধতের ঘোর কেটে গেলেই তারা নিজের পরিচয়, প্রতিচ্ছবি ও চরিত্রাদর্শ আয়নার ন্যায় বোধোদয় হয়।
তাই আসুন, বিবেক বিবেচনাবোধ জাগ্রত করি। আমিত্ববোধ, অহমিকা ও অন্ধত্ব পরিত্যাগ করি। পাপপুণ্য, ন্যায় অন্যায় বা সাদাকালো বুঝার চেষ্টা করি।
ধন্যবাদান্তে-
শারফিন চৌধুরী।
তাং ২৭/০১/২০১৮ ইং।